বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যশোরের দুটি উপজেলা মণিরামপুর ও কেশবপুরে তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ও এক প্রার্থীর প্রার্থীতা স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার আনিছুর রহমান তাদের প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করেন। বাতিল হওয়া তিন প্রার্থী হলেন, মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী আমজাদ হোসেন লাভলু, কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সামাদ, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট ওজিহুর রহমান। আর প্রার্থীতা স্থগিত হওয়া প্রার্থী হলেন মণিরামপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল হক। এর আগে, এই দুটি উপজেলা থেকে মনোনয়র জমা দিয়েছিলেন ৩৪ জন। এর মধ্যে মণিরামপুরে তিনটি পদে ১৮ জন ও কেশবপুরে তিনটি পদে ১৬ জন।
জানা যায়, কেশবপুরে তিনটি পদে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। বুধবার ছিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষে ১৪ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন চেয়ারম্যান, পাঁচজন ভাইস চেয়ারম্যান ও দুইজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। এছাড়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়ারা হলেন জেলা জামায়াতের সূরা সদস্য মাওলানা আব্দুস সামাদ ও কেশবপুর উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট ওজিহুর রহমান। মাওলানা আব্দুস সামাদ চেয়ারম্যান পদে ও অ্যাডভোকেট ওজিহুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।
চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া সাতজন প্রার্থী হলেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম স¤পাদক নাসিমা আকতার সাদেক, দপ্তর স¤পাদক মফিজুর রহমান, সহপ্রচার স¤পাদক এসএম মাহবুবুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মুজাহীদুল ইসলাম, মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-নূর-আল আহসান, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুর রহমান ও ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পলাশ কুমার মল্লিক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ রানা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন সাহা, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী রাবেয়া খাতুন ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মনিরা খানমের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
এদিকে, মণিরামপুর থেকে এবার ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ১৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যাচাই বাছাই শেষে ১৭ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। জনতা ব্যাংকের ঋণ খেলাপির অভিযোগে উপজেলা পরিষদে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলুর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। আয়কর রিটার্নের মূল কাগজপত্র দাখিল না করায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াত নেতা ফজলুল হকের প্রার্থীতা স্থগিত করা হয়েছে। বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম, জামায়াত নেতা মাওলানা লিয়াকত আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হক, মঞ্জুর আক্তার, সন্দীপ ঘোষ ও পিলাপ মল্লিক। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে, সুরাইয়া আক্তার, মাহাবুবা ফেরদৌস পাপিয়া, মহিলা জামায়াত নেত্রী গুলবদন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার, মাজেদা খাতুন, আমেনা খাতুন এবং মুছা. জেসমিনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে।
‘জনতা ব্যাংক মণিরামপুর শাখায় ঋণ খেলাপি থাকায় আমজাদ হোসেন লাভলুর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। প্রার্থীতা ফিরে পেতে আমাগী তিন দিনের মধ্যে তিনি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আপিল করতে পারবেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আমজাদ হোসেন লাভলু বলেন, জনতা ব্যাংক মণিরামপুর শাখা আমাকে ঋণ পরিশোধের ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। আমি প্রার্থীতা ফিরে পেতে আপিল করব।
এদিকে আয়কর রিটার্নের মূল কাগজপত্র দাখিল না করায় জামায়াত নেতা ফজলুল হকের প্রার্থীতার বৈধতা ঝুলে আছে বলে জানিয়েছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্মকর্তা কল্লোল বিশ্বাস। ফজলুল হক বলেন, দলের কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আমরা তিন পদে মনোনয়ন কিনেছিলাম। আমি কিনেছি চেয়ারম্যান পদে। এখন দলের সিদ্ধান্তে আমরা আবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। তিনি বলেন, নির্বাচন অফিস থেকে আমাকে ফোন করে আয়কর রিটার্নের মূল কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে। নির্বাচন করব না এই কারণে আমি যাচাই বাছাইয়ে উপস্থিত হইনি।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রার্থীদের ভেতর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৩ এপ্রিল। প্রথম ধাপে নির্বাচন হওয়া এ উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে।