যশোরে ৮ উপজেলা চেয়ারম্যানের সামনে
বড় চ্যালেঞ্জ শক্তিশালী দলীয় প্রতিপক্ষ
প্রতীক চৌধুরী
নির্বাচনে আসছে না বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগও প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে না। ফলে এবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা। যশোরের ৮টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তিশালী দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপ সক্রিয় হওয়ায় প্রত্যেক উপজেলায় প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়বে। সবাই চাইবে নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে। এতে করে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বলি হতে পারেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বাড়তে পারে সহিংসতাও।
জানা যায়, সর্বশেষ নির্বাচনে যশোরের ৬টি উপজেলায় নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হন। তারা হলেন, চৌগাছায় মোস্তানিছুর রহমান, শার্শায় সিরাজুল হক মঞ্জু, মণিরামপুরে নাজমা খানম, অভয়নগরে শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর, বাঘারপাড়ায় ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী ও সদরে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। আর কেশবপুরের কাজী রফিকুল ইসলাম ও ঝিকরগাছার মনিরুল ইসলাম নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করে নির্বাচিত হন।
আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যশোর সদরে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে ছাড় দিতে নারাজ বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, যুবমহিলা লীগের নেত্রী ফাতেম আনোয়ার। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে ও গণসংযোগের মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন।
চৌগাছা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তানিছুর রহমানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ মাঠে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম হাবিবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। অনেকে গণসংযোগ করছেন নিয়মিত।
ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামকে লড়তে হবে দলের শক্তিশালী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাড. আলী রায়হান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল।
শার্শা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জুর বিরুদ্ধে লড়বেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা যুবলীগের নেতা অহিদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব উদ্দিন, হাসান ফিরোজ টিংকু, হাদিজ্জামান প্রমুখ।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমা খানমের সামনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। এই উপজেলায় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় আসন্ন উপজেলায় নয়া সমীকরণ তৈরি হয়েছে। লড়তে চান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, বর্তমান সাংসদ ইয়াকুব আলীর ভাই অলিয়ার রহমান, কামিয়ার রহমান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব খান।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। এবার তাকে লড়তে হবে একাধিক দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এই উপজেলায় একাধিক প্রার্থী মাঠে আছেন। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা সাদেক, দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি সৈয়দ নাহিদ হাসান প্রমুখ।
বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী উপনির্বাচনে বিজয়ী হন। তার স্বামী নাজমুল ইসলাম কাজলের মৃত্যুতে পদটি শূণ্য হয়। এই উপজেলায় এবার শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আরও মাঠে আছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবীর বিপুল ফারাজি, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রউফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজীব রায় প্রমুখ।
অভয়নগর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীরকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। শ্রমিক নেতা রবিন অধিকারী ব্যাচা, ভাইস চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান তারু আগামী নির্বাচনে লড়বেন বলে শোনা যাচ্ছে।
জানতে চাইলে ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়া উচিত নয়। মাঠ উন্মুক্ত থাকুক। যার জনপ্রিয়তা আছে, জনগণ তাকে নির্বাচিত করুক। দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন তাদের জন্য কঠিন, যারা জনপ্রিয় নয়। জনপ্রিয় নেতাদের জন্য দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন সহজ।’
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, এবার দলীয় প্রতীক থাকছে না। দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এক্ষেত্রে সবাই বিজয়ী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এতে পেশি শক্তি, ক্ষমতার দাপটসহ নানা রকমের চেষ্টা থাকবে। সেক্ষেত্রে বিজয়ী হওয়া সবার জন্যই কঠিন হবে। তবে সরকার চাইছে জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দিতে পারে, সরকার সেই উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভোটের মাঠে ৫ জন প্রার্থী থাকলেও ভোটাররা আমাকে বেছে নিবেন। কারণ আমি ১৫ বছর জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগনের সঙ্গে মিশে আছি। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। করোনাকালে আমি পাশে ছিলাম। সেটা চিন্তা করলে জনগণ আমাকেই বিজয়ী করবে।