স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর শহর যানজটমুক্ত করতে অবৈধ ফুটপাত দখল উচ্ছেদ ও অবৈধ ইজিবাইক, রিকসা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করেছে পৌরসভা। রোববার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে এই পৌরসভার এই অভিযানে ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ইজিবাইক, অটোরিকসা চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও প্রভাবশালীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এতে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর ফুটপাত দখলকারী বহুতল ভবন মালিক ও অবৈধ ইজিবাইক-রিকসার গ্যারেজ মালিকরা বরাবরই অভিযানের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কিছুদিন পর ফের একই অবস্থায় ফিরছে যানজট। পৌরসভার একতরফা অভিযানের সমালোচনা করে প্রতিবাদ বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোর জেলা শাখা।
জানা যায়, যশোর জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরে যানজটে নিরসনে অবৈধ ফুটপাত দখলদার, অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকসা বন্ধে অভিযান শুরু করেছে পৌরসভা। পৌরবাসির যানজটের হাত থেকে স্বস্তি দিতে পুরো রমজান মাস জুড়ে এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
রোববার সকালে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের ফোর্স ও পৌর কমিউনিটি পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন। শহরের দড়াটানা, জজকোর্ট মোড়, হাসপাতাল মোড়, চিত্রার মোড়, থানার মোড় এলাকা থেকে ৭০ টির অধিক ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত অটোরিকসা জব্দ করা হয়।
এসময় যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে যানবাহন ট্রাফিক অফিসে রাখা হয়। প্রথমদিন অবৈধ অটোরিকসা ও ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও পর্যায়ক্রমে ফুটপাত দখলমুক্ত করতেও অভিযান করা হবে।
আব্দুল মাজেদ নামে এক অটোরিকসা চালক বলেন, অনেকেই গ্যারেজের রিকসা ভাড়ায় চালায়। এই অভিযানে তাদেরই ক্ষতি হচ্ছে বেশি। পৌরসভা গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সাধারণ দিনমজুর চালকরা অর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে।
চলমান অভিযানের বিষয়ে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহমেদ বলেন, মটরচালিত অটোরিকশার কোন অনুমতি নেই। রমজান মাসে শহরে যানজট কমাতে এবং জনজীবনে চলাচলে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এ অভিযান। অভিযান পরিচালনা করার আগে সতর্ক করতে দুই দিন আগে মাইকিং করা হয়েছে। জনস্বার্থে এমন অভিযান চলমান থাকবে। তিনি আরও বলেন, এবার মটর ভাঙ্গা হচ্ছে না। শর্ত সাপেক্ষে স্ব-স্ব মালিকের রিকসা, ইজিবাইক ফেরত দেওয়া হবে।
তবে, ইজিবাইক, অটোরিকসার ছোট বড় গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, পৌরসভার এ অভিযানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোর জেলা শাখা। সংগঠনের সম্পাদক তসলিম-উর-রহমানের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যশোর পৌরসভা কর্তৃক ফুটপাতে কাজ করে খাওয়া দরিদ্র মানুষকে পুনর্বাসন বাদে উচ্ছেদের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। রোজার আগে দরিদ্র মানুষদের পুনর্বাসন বাদে উচ্ছেদ করে হাজার হাজার মানুষকে পথে বসালো পৌরসভা। এই মানুষেরা কাজ হারালো, পরিবার পরিজনের মুখে অন্ন কিভাবে দেবে পৌরসভা ভাবলো না। যা অমানবিক ও মানুষের মৌলিক (খাদ্যের) অধিকারের উপর আঘাত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, একদিকে যুদ্ধ সাজে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে পৌরসভার ভিতর বহুতল ভবন নির্মাণকারী ধনীরা সড়কের অর্ধেক ইট, বালু, পাথর, রড, সিমেন্ট রেখে দখল করে নিয়েছে। প্রতিনিয়ত সেখানে যানজট দুর্ঘটনা ঘটছে। সে বিষয়ে পৌরসভা নীরব। বিভিন্ন বড় বড় শো-রুমসমূহ ফুটপাতের উপর দ্রব্যসামগ্রী রেখে পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। সে বিষয়েও পৌরসভা নিরব। আমরা পৌরসভার দ্বিমুখি আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পুনর্বাসন বাদে গরিব মানুষদের উচ্ছেদ বন্ধ করার আহবান জানাচ্ছি।