বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ঢাকা বিমানবন্দরে ২৩ লাখ টাকাসহ আটক বেনাপোল কাস্টমস হাউজের বরখান্ত হওয়া সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুই কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল আমিনের কাছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা ও বিমানবন্দর কর্মকর্তার সাক্ষ্য দেন। ঘটনার সময় তারা ঢাকা বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ছিলেন। তবে তদন্তের স্বার্থে সাক্ষীদের পরিচয় প্রকাশ করেনি দুদক।
দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল আমিন বলেন, প্রায় দেড় ঘন্টা সাক্ষ্যগ্রহণকালে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে। নথি যাচাই বাছাই করে দ্রুতই চার্জশিট দেয়া হবে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বেনাপোল কাস্টমস হাউজের তৎকালীন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খন্দকার মুকুল হোসেনকে ২৩ লাখ টাকাসহ আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মুকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঘটনার পর ছয়মাস তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল আমিন মামলাটি করেন। তিনি এই মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা।
খন্দকার মুকুল হোসেন ২০১০ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঢাকাতে ক্যাশিয়ার পদে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে উত্তীর্ণ হন। তিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে যোগদান করেন। যোগদানের পর বেনাপোল বন্দরের ৩১ নম্বর ওয়েব্রিজসহ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সাধারণ পূর্ত শাখায় দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। সেখানে দায়িত্ব পালনের সময় দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জন করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
২০২২ সালের ২৬ আগস্ট সকালে মুকুল হোসেন ঢাকার উদ্দেশ্যে যশোর বিমানবন্দরে আসেন। বোর্ডিং পাসের সময়ে বন্দরের স্ক্যানিং মেশিনে তার বহন করা ব্যাগে বিপুল পরিমাণ টাকার উপস্থিতি পান নিরাপত্তাকর্মীরা। যশোর বিমানবন্দর বিষয়টি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মুকুলের ব্যাগ তল্লাশি করে ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকার উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মুকুল টাকার বৈধ উৎস বলতে পারেননি। তবে এসময় তিনি বিমানবন্দর টয়লেটে গিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন সদস্য ও বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কাস্টমসের পদস্থ কয়েক কর্মকর্তার সাথে তার কথোপকথনের প্রমাণও তদন্ত কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে।
এদিকে মুকুলের কাছ থেকে উদ্ধার টাকা এবং অন্যান্য মালামাল বেনাপোল কাস্টম হাউজে পাঠানো হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম বেনাপোল কাস্টমসে অভিযান চালিয়ে মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখনও তিনি টাকার উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হলে দুদক প্রধান কার্যালয়ে মামলা করার অনুমতি প্রার্থনা করা হয়। অনুমতি পাওয়ার পর এ মামলা করা হয়। মুকুল টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার কাকড়াজান গ্রামের খন্দকার আহসান হাবীবের ছেলে।