স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ব বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ। প্রায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিদ্যাপীঠের লাইব্রেরি ছিল জবুথবু অবস্থায়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ সেটি সংস্কার করে আধুনিকায়ন করেছে। যার ফলে বদলে গেছে লাইব্রেরির দৃশ্যপট। নিরিবিল, মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা বই পড়ছেন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে পাঠক সংখ্যা। একই সাথে লাইব্রেরির ভিতরে বঙ্গবন্ধু ও মুজিব কর্ণার, মাইকেল মধুসূদন গ্যালারি এবং সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে।
এতে করে একজন শিক্ষার্থী যেমন বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে তেমনি জ্ঞান অর্জন ও জীবন ধারণের বহুমাত্রিক চর্চার সুযোগ পাবে। লাইব্রেরির এমন পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমান স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থায় স্মার্ট শিক্ষার্থী গড়ে তোলার লক্ষ্যে লাইব্রেরির আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। ১৯টি বিষয়ে অনার্স ও ১৭টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরের পাঠদান করা হয়। প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিকে সেরা সাফল্য লাভ করা প্রতিষ্ঠানটির এই নান্দনিক পরিবর্তন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের আকৃষ্ট করে। কলেজের আব্দুল হাই কলাভবনের নিচতলায় গড়ে তোলা এই লাইব্রেরিতে প্রায় ত্রিশ হাজার বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে।
কিছুদিন আগেও জায়গা স্বল্পতা ও নানা সংকটের কারণে এই লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার পরিবেশ খুবই সংকীর্ণ ছিল। সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তারের একান্ত প্রচেষ্টায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্প ও কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে লাইব্রেরিটি ঢেলে সাজানো হয়েছে। নতুনরুপের লাইব্রেরিতে মনোররম পরিবেশ ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত সুবিশাল কক্ষে একসঙ্গে বসে ৮০ জন পাঠক বই পড়তে পারবেন।
ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খেলা থাকে। শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে বসে পাঠ্যবই, চাকরির বই, গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, কাব্যগ্রন্থসহ বিভিন্ন ধরণের বই পাঠ করেন। একই সাথে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে রয়েছে নানা রকমের বই।
যা পড়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। আর মাইকেল মধুসূদন দত্ত গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে মহাকবির সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। মধুসূদন সম্পর্কিত নানা ধরনের বইয়ের সংগ্রহ রাখা হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে ব্যাপক সাড়া পড়ছে বলে মনে করছেন লাইব্রেরিয়ান ও শিক্ষকবৃন্দ।
এদিকে, পড়ার পরিবেশ উন্নত হওয়ায় পাঠকদের আগ্রহও দিনদিন বাড়ছে। এজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের গণিত বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াইজ হোসেন বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে মর্জিনা আক্তার ম্যাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কজেলের আমূল পবিবর্তন হয়েছে। কলেজ শিক্ষা ব্যবস্থায় যেমন পরিবর্তন ঘটেছে তেমনি কলেজের পরিবেশও সুন্দর হয়েছে। আগে যে লাইবেরি ছিলো সেখানে বসে পড়ার মত পরিবেশ ছিলো না। এখন লাইব্রেরিতে বই নিয়ে পড়লে আর উঠতে মন চাই না। শিক্ষার্থীদের এমন সুন্দর একটা লাইব্রেরি উপহার দেওয়ার জন্য কলেজ প্রসাশনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া ইয়াসমিন আঁখি বলেন, লাইব্রেরিতে বসে শ্রেণির পড়া পড়ছেন। তিনি নিরিবিলি পরিবেশে বসে পড়া এগিয়ে নিতে পেরে খুশি। তাছাড়া প্রয়োজনীয় বই এখান থেকে নিয়ে পড়তে পারাতে নোট বা গাইড বইয়ের জন্য বাড়তি ভোগান্তি হয় না।
কলেজের লাইব্রেরিয়ান আক্তার হোসেন বলেন, পুরাতন লাইব্রেরিটি সিডিপি প্রজেক্ট আসার পর নতুন রুপে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আগে লাইব্রেরির পরিবেশ এতটা সুন্দর ছিলো না। প্রত্যেক পাঠকের জন্য আলাদা আলাদা বসার ডেস্ক করা হয়েছে। দিনদিন পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ৩০ হাজার বই সংগ্রহে রাখা হয়েছে। বইয়ের সংখ্যা আরো বাড়ানো হচ্ছে।
ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহজাহান কবীর বলেন, আধুনিক সুবিধা সম্বিলিত লাইব্রেরিতে তিনটি জোন করা হয়েছে। একটি জোনের নাম সাইক্লোজিক্যাল কাউন্সিলিং সেন্টার। সেখানে শিক্ষার্থীদের মানসিক সংকটের জায়গা নিরাসনে কাজ করা হবে। যেন মানসিক বিশাদগ্রস্থ হয়ে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে না উঠে।
এছাড়াও মাইকেল মধুসূদন দত্ত গ্যালারি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে জানতে পারবে। তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে।
সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার বলেন, লাইব্রেরি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন এখানে সুন্দর পরিবেশে পড়াশুনা করে মানুষের মত মানুষ হতে পারে, জ্ঞান ভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট প্রজন্ম হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কলেজের লাইব্রেরিটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
একই সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্ণারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এছাড়া সাইকোলজি সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি কমাতে একজন শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে তদারকি করা হবে।