মণিরামপুর সংবাদদাতা
যশোরের মণিরামপুরে পরীক্ষার কক্ষে নকল নিয়ে ধরা পড়ার পর সুইসাইড নোট লিখে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে গতকাল সরেজমিন গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে আসেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ সময় তদন্ত কর্তাদের উপস্থিতিতে দুপুরে শিক্ষার্থীর স্বজন, কলেজের শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতরা কলেজ অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের উপর হামলা করে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা বাধা দিলে হামলাকারীরা অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে তার উপর জুতা ও পচা ডিম ছুড়ে মারাসহ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে অন্তত ১৫ জন শিক্ষক কর্মচারী মারপিটের শিকার হয়েছেন। হামলার সময় দুই তদন্ত কর্মকর্তা অধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ ছিলেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলার শিকার শিক্ষক চিন্ময় কুন্ডু বলেন, কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল। এর মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে কলেজে আসেন। তারা অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকতেই বাইরে থেকে দল বেঁধে নারী পুরুষ কলেজ চত্বরে ঢুকে পড়েন। বাইরের লোকজনের সাথে আমাদের কলেজের বর্তমান পুরাতন কিছু শিক্ষার্থী ছিল।
চিন্ময় কুন্ডু বলেন, কলেজ চত্বরে লাঠিসোঁটা, পচা ডিম, টমেটো ও জুতা নিয়ে লোকজন এসে সরাসরি অধ্যক্ষের কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করেন। এতে বাঁধা দিলে হামলাকারীরা আমাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করাসহ শিক্ষকদের মুখে জুতা, ডিম ও টমেটো ছুড়ে মেরেছে। দুই তিনজন কর্মচারীর জামা টেনে ছিঁড়ে দেয়। এতে অন্তত ১৫ জন মারপিটের শিকার হয়। এ সময় হামলাকারীরা কয়েকটি চেয়ার ভাংচুর করে।
প্রভাষক চিন্ময় কুন্ডু আরো বলেন, এক পর্যায়ে বাধা ভেঙ্গে দুই নারীসহ কয়েকজন পচা ডিম ও জুতা নিয়ে ভিতরে ঢুকে অধ্যক্ষের উপর হামলা করে।
এই শিক্ষক বলেন, আমরা সবাই প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছি। আমাদের উপর হামলার ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ প্রতিষ্ঠানে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, যা শুনেছেন সব সত্যি। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। কারো সাথে কোন কথা বলতে চাই না।
তবে এই বিষয়ে হামলাকারী বা মৃতের ছাত্রীর স্বজনদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নেহালপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আব্দুল হান্নান বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।
যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন বলেন, গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে আঞ্চলিক উপপরিচালকের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়েছিলাম। সেখানে শিক্ষকদের সাথে কথা চলা অবস্থায় বহিরাগত কিছু লোক এসেছিল। আমরা কক্ষের ভিতরে ছিলাম। আত্মহত্যার শিকার ছাত্রীর পরিবারের সাথে কথা বলতে পারিনি। ঘটনা তদন্তে অন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
গেল ৩০ মার্চ গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিনে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক পরীক্ষার্থী।
পরে বাড়ি ফিরে সুইসাইড নোট লিখে ওই দিন দুপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সাবিনা। এরপর থেকে নিহত ছাত্রীর স্বজন, সহপাঠী ও এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আসছেন।