রিজাউল করিম, সাতক্ষীরা
প্রয়োজনীয় সবধরনের ব্যবস্থা থাকার পর গণগ্রন্থাগারমুখী হচ্ছে না মানুষ। এতে করে ক্রমেই পাঠক কমছে সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে। গণগ্রন্থাগারের আলমারীগুলোতে অলস পড়ে আছে নানা প্রকারের বই।
সরজমিনে বেলা ১১টার দিকে গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায় সাত থেকে আটজন পাঠক বই পড়ছেন। যেখানে এক সাথে ১০৫ জন পাঠকের বসে বই পড়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। পাঠকদের তদারকির জন্য স্টাফ রয়েছে তিনজন।
গণগ্রন্থাগারে পাঠক কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বইপত্রের ডিজিটাল ভার্সন সহজলভ্য হওয়াকে যেমন দায়ি করা হচ্ছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তিকেও দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকৃত পাঠকরা গণগ্রন্থাগারে না আসলেও পড়া থেকে পিছিয়ে নেই। তারা এখন অনলাইনেই প্রয়োজনীয় সব বই পড়তে পারছে। অনেক ক্ষেত্রে যেসব বই মফঃস্বলের গণগ্রন্থাগারে পাওয়া যায় না, সেসব বইও পড়তে পারছে।
আবার, অনেকে মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তির কারণে অনেকে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছেন। এছাড়া তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের মধ্যে বই পড়া অভ্যাস কোন ক্রমেই গড়ে উঠছে না। তবে গণগ্রন্থাগার কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড না থাকাকেও ‘গণগ্রন্থাগারে শূন্যতা’ সৃষ্টির জন্য দায়ী করছেন কেউ কেউ।
পাঠক আল-আমিন বলেন, আমরা এখানে এসে সব ধরনে বই পাই না। এছাড়া এখানে একাডেমিক কোন ধরনের বই পত্র নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয় না। তাহলে গণগ্রন্থাগারে এসে আমাদের লাভ কি? সেই সাথে বৈদি্যুতিক চাহিদা পূরণে বিকল্প ব্যবস্থা নেই।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আল মুস্তানছির বিল্যাহ বলেন, বর্তমানে অনেকেই অনলাইনে বই পড়ছেন। শুধুমাত্র বিশ^বিদ্যালয় ছাড়া, লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে লাইব্রেরিতে গিয়েও অনেকে প্রয়োজনীয় বই পান না, কিন্তু সেসব দরকারি বই অনলাইন থেকে কিনে নিচ্ছেন, বা পড়তে পারছেন। তবে, যারা গবেষণাধর্মী কাজ করে তাদের জন্য লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। আবার, অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছেন, যেটা ক্ষতিকর। সে হিসেবে বাধাই করা বইই সবার জন্য শ্রেয়। এজন্য লাইব্রেরিতে যাওয়া দরকার, পরিকল্পিত উপায়ে তরুণদের পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার দরকার।
কবি ও প্রাবন্ধিক শুভ্র আহমেদ বলেন, গণগ্রন্থাগারে বর্তমানে যে বইগুলো রয়েছে বা পাঠকরা বাসায় নিয়ে পড়ছে তাতে পাঠকদের হচ্ছে না। এক সময় বই পড়ে পাঠকরা জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিনোদন পেত। এখন জ্ঞান ও বিনোদনের জন্য পাঠকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব এর মধ্যে থেকে সবকিছু পাচ্ছে। যার কারণে লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। পাঠকদের লাইব্রেরি মুখি করতে হলে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়াতে হবে। যেখানে পাঠকরা এসে অংশগ্রহণ ও তাদের পছন্দের বই পাবে, কথা বলতে পারবে। তাহলে আগের মত লাইব্রেরিতে পাঠক আসবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান জিয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে গণগ্রন্থাগারে পুস্তক রয়েছে ৩৩৫২টি। পত্রিকা নেয়া হয় ১১টি। বাংলা সাময়িকী ১০টি ও ইংরেজি সাময়িকী নেয়া হয় ২টি। এছাড়া আমাদের এখানে পাঠকদের জন্য তিনটি কম্পিউটার ও ফ্রি ইন্টারনেট রয়েছে। আমাদের নিয়মিত পাঠক সদস্য ১১০জন। এখানে বছরে ৭টি দিবস পালন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গণগ্রন্থাগার শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া আমাদের ৮জন স্টাফ এর জায়গায় ৩ জন রয়েছি। গণগ্রন্থাগারের সৌরবিদ্যুৎ এর লাইনটি নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের অবকাঠামগত উন্নয়ন করলে আরও পাঠক বাড়বে।