বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নিয়ে আসা ‘সোলার প্যানেল’ এর মালামালবাহী ট্রাক আটকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ও প্রক্টর বডির উপস্থিতিতে ট্রাকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ করে পণ্য খালাস করেছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি গ্রীন এনার্জির আওতায় আনার জন্য বুধবার চট্রগ্রাম থেকে ১২টি ট্রাকে করে সোলার প্যানেল নিয়ে আসে সুপার স্টার রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড। কিন্তু ৫টি ট্রাক সোলার প্যানেল আনলোড করতে পারলেও চাঁদা দাবি করে বাকি ট্রাকগুলো আটকে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২টি ট্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে বাকি পাঁচটি ট্রাক যশোর বাস টার্মিনালে অবস্থান করে। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে যবিপ্রবি উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে ট্রাকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সোলার প্যানেল আনলোড করে ।
সৌরবিদ্যুৎ মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, গতবছরের জুনে যবিপ্রবি ও সুপার স্টার রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড এর মধ্যে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে কোম্পানিটি। চুক্তি অনুযায়ী ১২টি ট্রাকে করে সোলার প্যানেল নিয়ে আসে সুপার স্টার রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেডের ট্রাক। কিন্তু যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল মুঠোফোনে কোম্পানির কাছে চাঁদা দাবি করে। ৫টি ট্রাক সোলার প্যানেল আনলোড করতে পারলেও বুধবার রাতে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয়ের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী চাঁদা দাবি করে বাকি ট্রাক গুলে আটকে দেয়। পরবর্তীতে ২টি ট্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে বাকি পাঁচটি ট্রাক যশোর বাস টার্মিনালে অবস্থান করে। পরে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির উপস্থিতিতে ট্রাকগুলো প্রবেশ করিয়ে আনলোড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা ট্রাকগুলো আনলোড করেছি; আপাতত কোন ঝামেলা দেখছি না। ফলে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কোম্পানির উর্ধতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে যাবো।
অভিযোগ অস্বীকার করে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওনারা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিক্রি করবে। এমনকি ছাদ ভাড়া নিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে; সেই ছাদ ভাড়াও দিচ্ছে কোম্পানি। ফলে এতো টাকা যারা বিনিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করছে; তাদের কাছে কেন চাঁদা চাইবো। এমন ধরনের অভিযোগ মিথ্যা। আসলেই একটি পক্ষ ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করতে এমন অভিযোগ করতে পারে। কোন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এই কাজের সঙ্গে জড়িত না। আমি ঈদের ছুটিতে এখনো গ্রামে, আর আমার সভাপতি দেশের বাইরে। আমাদের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ উঠেছে; সেটা মিথ্যা।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সৌর বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসার জন্য টেণ্ডার নেয়া থেকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সোলার প্যানেল নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু বুধবার মধ্যরাতে কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাকে জানায়, মোট ১২টি ট্রাকের মধ্যে ৫টি ট্রাক কোম্পানি আনলোড করতে পেরেছে। বাকি ৭টি ট্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্রনেতা আটকে রেখে চাঁদা দাবি করেছে।
তাই বৃহস্পতিবার সকালে আমি নিজের তত্ত্বাবধানে গাড়িগুলো ক্যাম্পাসে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সকল ভালো কাজে যদি এইরকম বাধা আসে তাহলে এইটা অনেক দুঃখজনক। যারা এইসব অপকর্মে জড়িত ছিল তাদের পরিচয় জানা গেছে। তবে আমি এখন নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। যদি কোম্পানি জড়িতদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’