স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোরের কেশবপুর ও মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদের বিপরীতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। তবে লড়াইটা হবে ঘরের মধ্যেই। প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা ও ঘরাণার। ফলে প্রতিপক্ষ হিসেবে দলের নেতাকর্মীরাই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। এতে করে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি আরও সক্রিয় হয়েছে। ভোটযুদ্ধ ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও প্রকাশ্যে আসার শংকা তৈরি হয়েছে। যদিও প্রার্থীরা বলছেন, ভোট উৎসবমুখর করতে দলের একাধিক প্রার্থী লড়ছেন। জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে নেমেছেন তারা।
জানা যায়, প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে যশোরের কেশবপুর ও মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আকতার সাদেক, দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান, সহ-প্রচার সম্পাদক এসএম মাহবুবুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না, মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-নূর-আল আহসান, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুর রহমান ও ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পলাশ কুমার মল্লিক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ রানা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন সাহা, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী রাবেয়া খাতুন ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মনিরা খানম।
অন্যদিকে, মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলুর মনোনয়ন ঋণখেলাপীর কারণে বাতিল হয়েছে। তবে এ প্রার্থী আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম, জামায়াত নেতা মাওলানা লিয়াকত আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হক, মঞ্জুর আক্তার, সন্দীপ ঘোষ ও পিলাপ মল্লিক। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুরাইয়া আক্তার, মাহাবুবা ফেরদৌস পাপিয়া, মহিলা জামায়াত নেত্রী গুলবদন, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার, মাজেদা খাতুন, আমেনা খাতুন এবং মুছা. জেসমিন।
প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই শেষে দুটি উপজেলায় নির্বাচন নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। উপজেলা শহর থেকে গ্রামের চায়ের কাপে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এবারের উপজেলা নির্বাচন। প্রথমে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচার প্রচারণা চালালেও শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় সিদ্ধান্তে ভোটে অংশগ্রহণ করছে না এমনটি শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত জানতে কেশবপুর উপজেলার দুই প্রার্থীর ব্যবহৃত মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি। তবে মণিরামপুর উপজেলায় জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন তারা ভোটে অংশগ্রহণ করবেন কি না সেটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এখনও পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত তারা এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আসছেন না।
আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ ভোটের কারণে পেশি শক্তি ব্যবহারের সংশয় করছেন সাধারণ ভোটাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন, একই দলের মধ্যে ভোট হচ্ছে। দলীয় প্রতীক থাকছে না। সেক্ষেত্রে দলীয় নেতা কর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে পৌঁছাতে পারে। এক্ষেত্রে তারা ভোটের মাঠে যাবেন কি না সেটা নিয়েও সংশয় কাজ করছে। কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না বলেন, এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতিক ছাড়া আনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেশবপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আনুষ্ঠিত হবে। তবে ভোটারদের প্রভাবিত করতে কিছু প্রার্থী কালো টাকার ছড়াছড়ি করবে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
একই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুমার মল্লিক বলেন, কেশবপুরে ইভিএম-এ এবার প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। দলীয় মনোনীত কোনো প্রার্থী নেই। সবার জন্য উন্মুক্ত এবারের ভোট। কিছুটা সংশয় কাজ করলেও আশা করি ভোটে জনগণের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটবে।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিকাইল হোসেন বলেন, এবারের নির্বাচন দলের সবার জন্য উন্মুক্ত। আমরা একই দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছি। পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে ৮ মে ভোট উৎসব করব।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত কোন প্রার্থী থাকছে না। সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ পাবো। জনগণ তাদের সঠিক জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে পারবে।