বাংলার ভোর প্রতিবেদক
টানা এক মাস ধরে যশোরে তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। প্রচন্ড রোদ, গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সবজির ক্ষেত। চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা, বেগুন, করলা, টমেটো, শসা ও মরিচের মতো সবজির ওপর গরমের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। পুড়ে মরে যাচ্ছে গাছ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। সকাল-বিকাল ক্ষেতে পানি দিয়েও গাছ বাঁচাতে পারছেন না। এতে সবজির উৎপাদন নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন তারা। চাষিদের দাবি, দুই তৃতীয়াংশ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তারা। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে, ১৫ শতাংশ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। আর্থিক মূল্যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্যমতে, যশোরে চলতি খরিপ-১ মৌসুমে ১৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে গ্রীস্মকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা, বাঘারপাড়া ও চৌগাছা উপজেলায় পটল, বেগুন, ঢেঁড়স, করোলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লাল শাক ও ডাটা শাক ও কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে গত প্রায় এক মাস টানা প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে সবজির গাছ লালচে হয়ে গেছে, কুঁকড়ে গেছে পাতা, বেশিরভাগ ক্ষেতের ফুল ও ফল ঝরে পড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে ক্ষেত ভেঙে দিচ্ছেন। চাষিদের দাবি দুই তৃতীয়াংশ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তারা। পাশাপাশি বাজারেও সংকট সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন তারা।
সদরের হৈবতপুর এলাকার কৃষক আমিন উদ্দিন বলেন, ‘গ্রীস্মকালীন সবজি মূলত ৩৫-৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা সহনীয়। সেচ দিয়ে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় চাষ সম্ভব। কিন্তু এ বছর তাপমাত্রা অনেক বেশি। পাশাপাশি টানা প্রায় এক মাস ধরে তাপদাহ অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে সবজি ক্ষেত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
জালাল মোল্লা নামে অপর এক কৃষক বলেন, ‘আমার ৭০ বছর বয়স। ৫০ বছর ধরে চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত। আমার জীবনে এত তাপমাত্রা দেখিনি। বেগুন গাছে ফলন নেই। পোকার আক্রমণ হয়েছে। কীটনাশক দিয়েও পোকা মারা যাচ্ছে না। পটলের ক্ষেত, লাউয়ের ক্ষেত গরমে কুঁকড়ায় গেছে। পটলগুলো হলুদ বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেক ক্ষেত কেটে দিয়েছি। বৃষ্টি হওয়ার পর নতুন করে আবার আবাদ করবো।’
চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক দাউদ আলী নামে অপর কৃষক বলেন, ‘আমার বিশ কাঠা বেগুনের ক্ষেত ও দশ কাঠা মরিচের আবাদ ছিল। এ গরমে সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের গ্রামের সকলের ক্ষেতের একই অবস্থা। অবস্থা যা মনে হচ্ছে, বারোআনা ক্ষতির শিকার হতে পারে।’
৪০ শতাংশ জমিতে করলা, জালি কুমড়া, লাউ ও বেগুন চাষ করেছেন আব্দুলপুর এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, গেল মাস ধরে যে গরম পড়ছে, তা শাকসবজি গাছের জন্য সহনীয় নয়। এই সময়ে সবগুলো গাছে ফলন থাকার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় কোনও গাছ বড় হয়নি। উল্টো রোদে পুড়ে করলা, জালি কুমড়া ও বেগুন গাছ মরে যাচ্ছে। বেশিরভাগ গাছই শুকিয়ে গেছে। পানি দিচ্ছি নিয়মিত, কিন্তু সকালে পানি দিলে দুপুরের আগেই শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি না হলে কোনও গাছই বাঁচবে না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ‘কৃষকরা যে পরিমাণ ক্ষতির কথা বলছেন সেটা হবে না। আমরা ক্ষেত রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে ১৫ শতাংশ ক্ষতির আশংকা রয়েছে।’
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ খরিপ মৌসুমে জেলায় ৩ লাখ ৯১৮ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য ছিল ৯৫২ কোটি টাকা।