বাংলার ভোর প্রতিবেদক
নাম নুরুল আমিন। যশোর সিআইডি পুলিশের এক সময়ের এএসআই। বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত। মাঝে কিছুদিন তিনি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জে ও খুলনা জেলার শিল্প পুলিশের কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলায় কর্মস্টেশন হলেও তিনি পড়ে থাকেন যশোরে। অভিযোগ রয়েছে যশোর সিআইডি পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিনি জেলাব্যাপি তোলা তুলে বেড়ান (অবৈধ অর্থ)। মাসে অন্তত ২০/২৫ দিন তাকে যশোরের বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা যায়। বিশেষ করে ভারতীয় অবৈধ পণ্য বেঁচা-বিক্রির স্থানগুলোত মূলত তার পদচারণা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরে কর্মরত থাকাকালে এএসআই নুরুল আমিন ছিলেন সিআইডির ওই সময়ের কথিত ক্যাশিয়ার। তিনি যশোর সদরসহ জেলার বাকি ৮ থানা এলাকায় আদায়কারী নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে সিআইডির নাম করে টাকা আদায় করতেন। প্রায় একযুগ যশোরে কর্মরত থাকাকালে তিনি যশোর জেলাব্যাপি এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন।
পরবর্তীতে নানা অভিযোগের কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে যশোর থেকে দূরের জেলা সিলেট ও পরে খুলনা শিল্প পুলিশে বদলি করেন। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে কর্মস্থল সাতক্ষীরা হলেও মাসে অন্তত ২০/২৫ দিন তিনি যশোরে থাকেন। তিনি সপরিবারে যশোর মুজিব সড়কস্থ জাগরণী চক্রের সামনে ‘নকশি মেটালের’ ২য় তলায় একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
সূত্র জানিয়েছে, এএসআই নুরুল আমিন সাতক্ষীরায় কর্মরত হলেও তিনি যশোর সিআইডিতে কর্মরত পরিচয় দিয়ে সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে এই তোলাবাজি বা অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করেন। যশোর শহরের বড় বাজার থেকে শুরু করে জেলার প্রায় ৫ শতাধিক বিভিন্ন অবৈধ কারবারিদের ‘স্পট থেকে মাসে অন্তত ৩০ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করছেন। এছাড়া বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উপায়ে সিআইডি পুলিশ যশোরের কয়েকজন এএসআই ও এসআই পুলিশ সদস্যদের নিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় (ছামারি) অবৈধ মালামাল আটকে জরিমানা বা চাঁদাবাজি করে চলেছেন ।
যশোর শহরের বড় বাজারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে যারা ভারতীয় পণ্য সামগ্রী বেচাকেনা করছেন তাদের কাছ থেকে সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তা দাবি করে এএসআই নুরুল আমিন মাসে অন্তত ১০ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করেনন।
বড় বাজার এলাকায় ফেন্সি মার্কেট, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, জুয়া, কাপড়, পটকাবাজি, আতশবাজি, ভারতীয় জিরা,এলাচসহ বিভিন্ন মসলা ব্যবসায়ী, হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী, ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়ার কাজে নিয়োজিত নারী, পুরুষদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে এই টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন ভেজাল কারবারিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন। বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে এই টাকা আদায়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। এই টাকা আদায় করে থাকেন বড়বাজার এলাকার কসমেটিক কাপড় ব্যবসায়ী আব্বাস, ও কসমেটিক্স ব্যবসায়ী কালু।
এরাই সব অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলে নুরুল আমিনের কাছে দেন। আর এ জন্য মাসের বেশির ভাগ সময় তাকে যশোর শহরের বড় বাজার ও রেল স্টেশন এলাকায় মহিলা চোরাকারবারীদের ধরতে বসে থাকেন। যশোর শহরের বড়বাজার ছাড়াও বেনাপোল, নাভারন, শার্শা, বাগআচড়া, ঝিকরগাছা চৌগাছা অভয়নগর মনিরামপুর ও কেশবপুর এলাকার অবৈধ কারবারিদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে কৌশল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে উৎকোচ আদায় করে থাকে। যশোর শহরের বড়বাজার এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আব্বাস, জানে আলম, খালিদকে নুরুল আমিন তার অবৈধ আয়ের টাকা থেকে সিংহভাগ টাকা দিয়ে এই তিন ব্যবসায়ীসহ আরো ৫/৬ ব্যবসায়ীকে তার অবৈধ উপার্জিত টাকা দিয়ে ভারতীয় কাপড় টাকা ভারতীয় কাপড়ের ব্যবসা করান নুরুল আমিন। চোরাকারবারিদের টোকেন ও স্লিপের মাধ্যমে তিনি মাসিক হিসাব-নিকাশ করে থাকেন। তার কর্মস্থল সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসের দায়িত্বশীলদের ম্যানেজ করে তিনি দিব্যি যশোরে অবস্থান করেন।
এ যেন ’শস্যের মধ্যে ভূতের খেলা’। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী-শুধু যশোর শহর নয় জেলার অন্যান্য থানা এলাকায়ও তার আদায়কারী নিয়োগ করা রয়েছে। ওই সব আদায়কারীরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্পট থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে টাকা তুলে এএসআই নুরুল আমিনকে প্রদান করেন। ফলে নুরুল আমিনকে প্রতিদিনই যশোর জেলার কোন না কোন থানায় যেতে হয়, নিয়োগকৃত আদায়কারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য। আর এভাবে এএসআই নুরুল আমিন যশোর সিআইডির নাম করে মাসে অন্তত ৩০ লাখ টাকা আদায় করেন।
যশোর শহরের বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, যশোর সিআইডি অফিসের তার আস্থাভাজন কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে মাসের প্রায় বেশি দিন সময় পার করেন বড়বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকানে। যা সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ও মোবাইল লোকেশন অনুসন্ধান করে এর সত্যতা মিলবে।
এই সব আদায়কারীরা হলেন, বেনাপোলের অবৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নাছির এবং কসমেটিক্স ও অন্যান্য ভারতীয় পণ্য ব্যবসায়ীদের আদায়কারী সোহাগ। মণিরামপুরের আদায়কারী প্রভাত, কেশবপুরে আব্বাস, অভয়নগরে হাসানসহ আরও কয়েকজন, চৌগাছায় জসিম, শার্শায় ইছা, ঝিকরগাছা ইছাক ও সোহাগ। এছাড়া বেনাপোলে রয়েছে তার ডজনখানিক আদায়কারী সদস্য। এখানে কয়েকটি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে আদায় করেন কয়েক লাখ অবৈধ টাকা।
যশোর সিআইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এএসআই নুরুল আমিন যশোর সিআইডিতে প্রায় ৫ বছরের অধিক সময় নেই। কিন্তু তার চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড কোনদিন বন্ধ হয়নি।
যশোর সিআইডির পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নুরুল আমিন নামে তার কোন পুলিশ কর্মকর্তা এখানে নেই। আর এ ধরনের দায়িত্ব পালন করার প্রশ্নই আসে না। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ পেলে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় সিআইডিতে আছে বলে জেনেছি। আপনারা সাতক্ষীরায় খোঁজ নেন সেখানে অভিযোগ করেন।
যশোরের পুলিশ প্রশাসন মাদক কারবারি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টরারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। বিগত কয়েক বছর যশোরের পুলিশ প্রশাসন কঠোরভাবে এই নীতি পালন করছে। অথচ সিআইডি পুলিশের পরিচয়দানকারী এএসআই নুরুল আমিনের এ তোলাবাজি চাঁদাবাজি ভারতীয় কাপড় বেচা কেনার মূল হোতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও দাবি জানিয়েছেন যশোরবাসী। পাশাপাশি নুরুল আমিনের কারণে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ ব্যাপারে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীমহল সিআইডি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও যশোর পুলিশ সুপারের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
তবে এ ব্যাপারে নুরুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানান, এসব ঘটনা মিথ্যে ও ষড়যন্ত্র।