‘‘বোর্ডের প্রশ্নব্যাংক থেকে মানসম্মত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়াই ফল ভালো হওয়ার কারণ’’
– বিশ্বাস শাহিন আহম্মেদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক যশোর বোর্ড
হাসান আদিত্য
এক বছর পর আবারও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেশসেরা হয়েছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৭ পরীক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী। এ বছর পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৩৩। যা দেশের আটটি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সেরা। ২০২২ সালে ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ পাসের হার নিয়ে দেশসেরা হয়েছিল যশোর শিক্ষাবোর্ড। তবে ২০২৩ সালের ফলাফলে শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় যশোর শিক্ষাবোর্ড। এ বছর আবার শীর্ষস্থান দখল করায় খুশি কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মেদ বলেন, ‘যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নব্যাংক থেকে মানসম্মত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা দেয়। এ কারণে বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মুখোমুখি হওয়া তাদের জন্য সহজ হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে একধরনের সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাও ফল ভালো হওয়ার একটি বড় কারণ।’
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবছর যশোর বোর্ডে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩ ভাগ। পাসের হারের এই ফলাফলে যশোর বোর্ড এবার দেশসেরা অবস্থান ফিরে পেয়েছে। এর আগে ২০২২ সালেও দেশসেরা হয়েছিল যশোর বোর্ড। এছাড়া এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৪৩১ ও ছাত্র ৯ হাজার ৩৩০ জন।
২০২৩ সালে যশোর বোর্ডে মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৭৫৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ২১৩ জন। পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৭ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২০ হাজার ৬১৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩৭০ ও ছাত্র ৯ হাজার ২৪৭ জন। এর আগে ২০২২ সালে যশোর বোর্ডে মোট ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৩১৪ জন। পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ১৭ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩০ হাজার ৮৯২ জন। এই ফলাফলে দেশসেরা হয়েছিল যশোর। এবারও দেশসেরা হলেও ২০২২ সালের পাসের হারকে অতিক্রম করতে পারেনি।
২০২১ সালের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও পরীক্ষায় যশোর বোর্ডে মোট ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩৯ জন। পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ০৯ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৬ হাজার ৪৬১ জন।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ জানিয়েছেন, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথাযথ নজরদারি এবং অভিভাবকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারায় এই ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে যশোরে বোর্ডে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে প্রশ্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সেভাবেই গড়ে উঠেছে। এছাড়া যশোর বোর্ডের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীদের মূল বইয়ের প্রতি নির্ভরতা বেড়েছে। এজন্য তারা ভাল ফলাফল অর্জন করেছে।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে
যশোর বোর্ডে এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফল করেছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার ও জিপিএ-৫ সব সূচকেই মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। এ বছর এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮১ হাজার ৪৫৯ জন ছাত্রী ও ৭৯ হাজার ৪৫৭ জন ছাত্র। মেয়েদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ২৫ আর ছেলেদের ৯০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ১১ হাজার ৪৩১ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। চার বছর ধরে এই শিক্ষা বোর্ডে মেয়েদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিশ্বাস শাহিন আহম্মেদ বলেন, শ্রেণিকক্ষে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের উপস্থিতি বেশি।
পড়াশোনায় তারা মনোযোগীও তুলনামূলক বেশি। তা ছাড়া মেয়েদের এগিয়ে দিতে অভিভাবকেরাও এখন বেশি সচেতন। সব মিলিয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো করছে।