বাংলার ভোর প্রতিবেদক
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি তিন প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মনিরুল ইসলামের সম্পদ বেড়েছে ১৬০৫%। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সেলিম রেজার সম্পদ কমেছে ৪১.৮০%। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লুবনা তাক্ষীর সম্পদ কমেছে ২৮.৯৮%। প্রতিদ্বন্দ্বি এই প্রার্থীরা সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।
২১ মে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ষষ্ঠ ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী হলেও ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর হলফনামায় সম্পদের হিসাব জানার প্রবল আকাক্সক্ষা রয়েছে ভোটারদের।
নির্বাচনী হলফনামায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে (বর্তমান চেয়ারম্যান) মনিরুল ইসলামের সম্পদ বেড়েছে ১৬০৫ শতাংশ, মো. সেলিম রেজার (বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান) সম্পদ কমেছে ৪১.৮০ শতাংশ এবং লুবনা তাক্ষীর (বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান) সম্পদ কমেছে ২৮. ৯৮ শতাংশ।
চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম (এসএসসি), বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান যথাক্রমে সেলিম রেজা (দাখিল) ও লুবনা তাক্ষী (এমএসসি) এবং অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেখানে তার নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছিলেন নগদ ১১ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকে জমা ৫ লাখ টাকা এবং ৬১ শতক কৃষি জমির মূল্য ৫ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ অন্যান্য সর্বমোট ২১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ১০ ভরি স্বর্ণ।
এরপর ২০১৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেখানে হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন অন্যান্য খাতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, নগদ ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা,আসবাবপত্র ইলেকট্রিক সরঞ্জামাদি ২০ হাজার টাকা, ৩০ ভরি সোনা এবং ৬১.৭৫ অকৃষি জমির মূল্য ৫ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
২০২৪ সালের হলফনামায় উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন, (অস্থাবর সম্পদ) নিজ নামে মূলধন ৪৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ব্যবসায়িক মূলধন ৪৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ টাকা, বিবাহকালীন ১০ ভরি স্বর্ণ ৩০ হাজার টাকা, ইলেকট্রিক সামগ্রি আয়কর প্রদর্শিত মতে ১৫ হাজার টাকা, আয়কর প্রদর্শিত মতে ৫০০০ টাকা, স্বামী/ স্ত্রীর নামে নগদ টাকা (ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে) ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ টাকা, আয় করে প্রদর্শিত মতে উপহার হিসেবে ৩০ ভরি সোনা, আয়করে প্রদর্শিত মতে ইলেকট্রিক সামগ্রি ২ লাখ টাকা, আয়করে প্রদর্শিত মতে আসবাব পত্রের মূল্য ১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে নিজ নামে পৈত্রিক সূত্রে কৃষি জমি ও অর্জন কালীন সময়ে আর্থিক মূল্য আয়করে প্রদর্শিত ৬ লাখ ১ হাজার টাকা, দানপ্রাপ্ত ৫ শতক জমি যার মূল্য ৫ লাখ টাকা, স্ত্রী/স্বামীর ৩.৫০ শতক জমির আর্থিক মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, ৩৫.৭৯ বর্গফুটের তিনতলা বাড়ি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বর্তমানে তার সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। বর্তমান সম্পদ বৃদ্ধির হার ১৬০৫%।
বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১৯ সালে হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ লাখ টাকা, ব্যবসায়িক মূলধন ১৫ লাখ ৫৯২ টাকা, ১ লাখ টাকা মূল্যের ১ টি মোটরসাইকেল, কৃষি জমিতে আয় ৫০০০ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, ইলেকট্রিক সামগ্রি ১ লাখ টাকা এবং নিজ নামে কৃষি জমি ৩৩ শতক। সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ ২৩ লাখ ৫ হাজার ৫৯২ টাকা।
২০২৪ সালের হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন কৃষি খাতে ২০ হাজার টাকা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মানী ৪ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা, নগদ ৫০ হাজার টাকা, প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ৫ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্রে জমা ১৫ হাজার ১৩৪ টাকা, একটি মোটরসাইকেল ১ লাখ টাকা, আয়করে প্রদর্শিত স্বর্ণ ৫০ হাজার টাকা, আয় করে প্রদর্শিত ইলেকট্রিক সামগ্রি ১ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ১ লাখ টাকা, কৃষি জমি ৩৩ শত অকৃষি জমি দান সূত্রে ১৫ শতক। সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৪ টাকা। বর্তমান সম্পদ কমেছে ৪১.৮০%।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লুবনা তাক্ষী এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনী হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন – কৃষি খাতে আয় ৪ হাজার টাকা, দোকান ভাড়া থেকে আয় ১৫ হাজার টাকা, ব্যবসায় থেকে আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, নগদ ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণ, ইলেকট্রিক সামগ্রি ৬০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৫০ হাজার টাকা, পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ২৩ শতক জমি এবং পৈত্রিক ২২ শতক সম্পত্তির মধ্যে ৪ আনা সম্পত্তি। যার সর্বমোট মূল্য ২৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত হিসেবে ৫৪ হাজার ৭২০ টাকা, নিজস্ব পেশায় ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা, অন্যান্য খাতে ৯ হাজার ৮৫০ টাকা, নগদ টাকা ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৪ টাকা, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৪৮০ টাকা, স্থায়ী আমানতের বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণ , ইলেকট্রিক সামগ্রী ৬০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ টাকা। বর্তমান সম্পদ কমেছে ২৮.৯৮%।
তবে উভয় পক্ষের কর্মী সমর্থকেরা বলছেন, হলফ নামায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রকৃত সম্পদের হিসাব উল্লেখ করেননি। আরো অনেক বেশি পরিমাণের সম্পদ রয়েছে এ সকল প্রার্থীদের।