কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) সংবাদদদাতা
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। জেলার এই শীর্ষ নেতা আটক হওয়ায় কালীগঞ্জে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে তার অনুসারীরা। চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে গ্রুপিং দীর্ঘ ২০ বছরের। ২০০৪ সালে আব্দুল মান্নানকে সভাপতি ও আনোয়ারুল আজীম আনারকে সাধারণ সম্পাদক করে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এরপর ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইজনই দলের প্রার্থী হিসেবে প্রচারনায় নামেন। কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গ্রুপিং শুরু হয়। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পন আব্দুল মান্নান আর আনোয়ারুল আজীম আনার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এরপর ২০১৪ সালে মনোনয়ন পেয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনোয়ারুল আজীম আনার। সেই থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে একচ্ছত্র আধিপত্ত্য বিস্তার করতে থাকেন এমপি আনার। এরপর ২০২১ সালের ১৩ জুলাই মারা যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় এরপর এক বনের এক রাজা এমপি আনার। এরপর বিভিন্ন সময় দলে নেতৃত্ব দেয়া পদহীন নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমপি আনারের সাথে গ্রুপিং শুরু করেন। এমপি আনারের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন অন্য গ্রুপটি।
এমপি আনারের বিপক্ষের এই গ্রুপটিকে দেখভাল করতেন জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। এরপর ২০২৩ সালের জুন মাসে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১০ সদস্যের মধ্যে ৭ জনই এমপি আনারের বিপক্ষে চলে যায়।
এই ৭ জনই জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর অনুসারী। রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন এমপি আনার। বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের চলে বাকযুদ্ধ।
এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেলে রাজনীতির মাঠে আবার স্বরুপে ফিরে আসেন এমপি আনার। তবে এই নির্বাচনে অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।
তথ্য নিয়ে আরো জানা গেছে, গত ২২ মে এমপি আনার হত্যার খবর এলাকায় পৌঁছালে শহরের ভূষণ স্কুল সড়কে দলীয় কার্যালয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খানসহ মিন্টুর অনুসারীরা। এরপর দুইদিন তাদের দেখা গেলেও আর দেখা যায়নি।
জেলার সাধারণ সম্পাদক এসেছিলেন এমপি আনারের পরিবার ও নেতাকর্মীদের স্বান্তনা ও সমবেদনা জানাতে। এরপর তাকেও আর দেখা যায়নি।
এমপি আনার হত্যার বিচারের দাবিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনেও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাইদুল করিম মিন্টুর অনুসারীদের দেখা যায়নি। হঠাৎ ১১জুন সাইদুল করিম মিন্টু ঢাকা থেকে ডিবির হাতে আটক হওয়ার খবর এলাকায় পৌঁছালে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন তারা।
এমনকি মিডিয়াকেও এড়িয়ে চলছেন তিনি। একরকম আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। কাউকে তেমন শহরে চলাফেরা করতেও দেখা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা বাংলার ভোরকে বলেন, রাজনীতিতে সব সময় ভালো যায় না। উত্থান-পতন থাকবেই। কিন্তু বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ দুঃসময় পার করছে।
এমপি আনারের অনুসারীরা বিচারের দাবিতে বিভিন্ন ইউনিয়নে মানববন্ধন বা বিক্ষোভ মিছিল করলেও অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীরা একদমই গা ঢাকা দিয়েছে। এটা আসলেই রাজনীতিতে অশনি সংকেত।
তিনি আরো বলেন, দলের এই গ্রুপিং আগে নিরসন করার উদ্যোগ নিতে হবে। এই হত্যায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এমপি আনারের অনুসারী কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু আমাদের অভিভাবক। তার হাতে যদি এমপি আনার নিরাপদ না হয় তাহলে সাধারণ নেতাকর্মী কেউই নিরাপদ নয়।
ডিবি তাকে আটক দেখিয়ে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। তিনি সত্যিই যদি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হন তাহলে তার ফাঁসি ও দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছি। এই হত্যাকাণ্ডে মিন্টুকে অর্থের যোগান দিয়েছে কালীগঞ্জের কিছু নেতা বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খানের মোবাইলে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।