বাংলার ভোর প্রতিবেদক
চলতি মৌসুমের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে। শনিবার টানা দু’ঘন্টার ঝুম বৃষ্টিতে শহরের বেশ কয়েকটি প্রধান সড়কসহ অলিগলি রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে, গত ৩ জুন জেলায় সর্বোচ্চ ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এদিকে, কয়েক ঘন্টার ভারি বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনের নোংরা পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠেছে। পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট, কালভার্ট বেদখল ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার করে না পৌরসভা, সে কারণেই এ ভোগান্তি। এই সমস্যার জন্য যশোর পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে নাগরিকের অসচেতনতা ও দায়িত্ব পালনে অনীহার জন্যও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে পৌর কর্তৃপক্ষ মনে করে।
যশোর বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরেই কখনো মাঝারি বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হচ্ছে জেলাটিতে। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়। এর পর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কিছুক্ষণ ও বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়। মাঝারি ও ভারি বর্ষণে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টিপাতে জেলায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েকদিন ধরে এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। তবে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
সরেজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের অন্তত ৩০টি সড়কে পানি জমে আছে। খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়া, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপ পট্টি, সরকারি মহিলা কলেজ থেকে পানি উন্নয়ন রোড, বেজপাড়া তালতলা, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আরবপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শহরের ছোট ছোট সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের দুই পাশের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনার নোংরা পানি উপচে পড়ে সড়কে।
সড়ক ছাপিয়ে সেই পানির ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। এছাড়া দুপুরের এ বৃষ্টিতে বেশি অসুবিধাতে পড়েন স্কুল ফেরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পৌরসভার ৫,৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে আছেন ওই ওয়ার্ডের মানুষেরা।
বিকেল চারটার দিকে শহরের পাইপপট্টি এলাকাতে যেয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুধারের দোকানগুলোতেই পানি প্রবেশ করেছে। দোকানের ভিতরে হাটু পানি। সব দোকানদারই মগ প্লেট বা বালতি দিয়ে দোকানের ভিতরে জমা পানি পরিস্কার করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে সড়কে হাটু পানি জমেছে। সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও অপরিস্কার আর পানি প্রবাহিত হওয়ার জায়গা না থাকাতে সেই পানি সড়কেই বেঁধে থাকছে। সড়কের উপরে বেঁধে থাকা পানি আবার দোকানে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, সড়ক নিচু আর ড্রেন হয়ে গেছে উচু। তাই এই অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। উপায় না পেয়ে ব্যবসায়ীরা যে যার মতো পানি পরিস্কার করছেন।’
৭ নাম্বার ওয়ার্ডের শংকরপুর এলাকার গোলাম মাজেদ বলেন, ‘বাড়িঘরে পাানি উঠেছে। ঘরের ভিতরে হাটু পানি। পরিবার নিয়ে অসহায়। তিনি বলেন, পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরো অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিস্কাশিত হতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’
শহরের খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের দক্ষিণ ফটক (গেট) থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। সড়কে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে অনেককে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
খড়কি এলাকার বাসিন্দা বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কুমার সরকার বলেন, ‘বৃষ্টিতে ছাত্রাবাস, বাসাবাড়ি দোকানে হাটু পানি বেঁধেছে। খাল বেদখল, পর্যাপ্ত নর্দমার অভাব, বক্সড্রেনের নামে খালনালা হত্যাসহ নানা কারণে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিনেও পৌরসভা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে পারেনি। তাই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবতে হয় এলাকার মানুষকে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, ‘শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা, নালা সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি।’
এদিকে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির সাথে আজকের বৃষ্টিতে কৃষি জমিতে পানি জমেছে। ধানের বীজতলা তৈরি করতে যে পানির প্রয়োজন তা বৃষ্টি থেকে পূরণ হয়েছে। এই বৃষ্টি সামগ্রিকভাবে ফসলের জন্য আশীর্বাদ। সবাই আমন মৌসুমের জমি প্রস্তুত করবেন।’
পানিতে ভাসছে পানি উন্নয়ন বোর্ড :
গতকালের ভারি বর্ষণে শহরের অন্য জায়গার মতো ওয়াবদা সড়কও ডুবে গেছে। সড়কের সরকারি মহিলা কলেজ গেট থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড পর্যন্ত সড়কে হাঁটু পানি। সড়কের পাশে পানিনিস্কাশনের ড্রেন থাকলেও পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। ফলে সড়কের পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভিতরে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডেও সড়কের মতো হাটু পানি। ফলে ভোগন্তিতে পড়েছেন সরকারি এই দপ্তরের বসাবসরত কোয়াটারের বাসিন্দারাও। পানি উন্নয়ন বোর্ডে হাটু পানি এমন কয়েকটি ছবি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ঠাট্টার ছলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন ‘পানিতে ভাসছে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড।