নিজস্ব প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৭৮নং খড়াশুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে রাখা হয়েছে সড়ক নির্মাণের সামগ্রি। স্কুল চলাকালীন চলছে পাথর ও পিচ (বিটুমিন) জ¦ালানোর মেশিন। বিকট শব্দ ও ধুলো উড়ে প্রবেশ করছে শ্রেণিকক্ষে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুল বন্ধের সময় রাস্তা নির্মাণের সামগ্রি মাঠটিতে রাখা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাঠ ভাড়া দিয়ে এই কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মাঠটিতে এলাকার কেউ খেলা করতে পারে না। বিষয়টি অনেকের কাছে বলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না।
সরেজমিন বুধবার দুপুরে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠটি দখল করে সড়ক নির্মাণের সামগ্রি রাখা হয়েছে। বালি ও পাথর রাখা হয়েছে মাঠের একটি বড় অংশজুড়ে। এছাড়াও রয়েছে পিচ (বিটুমিন) ও পাথর মিশ্রণের প্লান্ট মেশিন। স্কুল চলাকালীন সময়ে চলছে এই প্লান্ট মেশিন। বিকট শব্দ আর পাথরের ধুলো উড়ে নষ্ট করছে পরিবেশ। বাতাসে এই ধুলো প্রবেশ করছে শ্রেণিকক্ষে। এছাড়াও পিচ জ¦ালানোর গন্ধে শ্রেণিকক্ষে বসতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও রয়েছে ভেকু মেশিন। রাস্তার সাথে মাটি খুঁড়ে বসানো হয়েছে পিচ জ¦ালানোর চুলা। টায়ার জ¦ালানোর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারপাশ। ঘনঘন ট্রলি ও ভারি যানবাহন চলাচল করছে মাঠটিতে। এসবের মধ্যে যাতায়াত করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যাতে করে ঘটতে পারে যেকোন সময় দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, স্কুলটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। আর রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের তৈলকুপ এলাকায়। স্কুল থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। আর এই রাস্তা নির্মাণ করছে ঝিনাইদহের মেসার্স শহিদুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সেতু খাতুন জানায়, ধুলা-বালির জন্য তার সহপাঠীরা ঠিকমতো স্কুলে আসছে না। বিকট শব্দ আর পিচ জ¦ালানোর গন্ধে ক্লাসে বসা যাচ্ছে না। আর বসলে ধুলায় ভরে যাচ্ছে। দ্রুত এগুলো সরানোর দাবি তার।
আরেক শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ জানায়, ধুলা-বালি ও বিকট শব্দের কারণে ঠিকমতো স্যারদের কথা শুনতে পাচ্ছি না। কালো ধোঁয়া একদম ক্লাসে ঢুকে পড়ছে। শ্রেণিকক্ষে বসাই যাচ্ছে না। অনেক দুর্গন্ধ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, বিকট শব্দ, ধুলা-বালি আর দুর্গন্ধে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের সাইট দেখভাল করা সাইফুল ইসলাম বলেন, রাস্তা নির্মাণ করতে হলে তো এগুলো এক জায়গায় রাখতে হয়। কোথায় রাখবো আমরা। দ্রুতই সরিয়ে নেয়া হবে।
স্থানীয় রিপন বিশ^াস নামে এক ব্যক্তি বলেন, টায়ার পোড়ানো গন্ধ, ধুলা-বালির কারণে এলাকায় থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে। এলাকার মধ্যে এই স্কুলের মাঠটিতে কোমলমতি শিশুরা খেলাধুলা করে। সেটিও দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে রয়েছে। এই মাঠ দখল করে রাস্তা নির্মাণের সামগ্রি ভাড়া দিয়ে রেখেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জমির হোসেন বলেন, স্কুল বন্ধের ভিতরে তারা এগুলো মাঠে রেখে গেছে। এর মধ্যে তিনি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু এখন আবার শুরু করেছে। মাঠ ভাড়া দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি ইউএনওসহ অনেকের জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কাজ করেই যাচ্ছে। এর মধ্যে পাঠদান করানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. খালেকুজ্জামান বলেন, বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে শুনেছি। দ্রুতই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।