স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৪০ থেকে ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি হাসপাতালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের অধিকাংশ অবস্থান করেন জরুরি বিভাগে। মূলত জরুরি বিভাগে রোগী আসলে তাদের টলি করে নামানো ও নির্দিষ্ট বেডে পৌঁছে দেয়া তাদের কাজ। নামে স্বেচ্ছাসেবক হলেও রীতিমত চাঁদাবাজি শুরু করেছে তারা। তাদের এই বৈধ চাঁদাবাজির একটি মাত্র হাতিয়ার পরিচয় পত্র। আর সেটি দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন নামে দেওয়া এই পরিচয় পত্রে নেই ইস্যু ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ। এই স্বেচ্ছাসেবক দলের অধিকাংশ সদস্য টলিতে রোগী উঠানোর জন্য উৎপেতে বসে থাকে জরুরী বিভাগে। দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জরুরি অক্সিজেন সেবাটিও দিতে জানেন না তারা। অর্থাৎ চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে তাদের ন্যুনতম প্রাথমিক ধারণা পর্যন্ত নেয়। সে কারণে অধিকাংশ সময় রোগী ও তার স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গোল হয়ে বসে আছেন ১০ থেকে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবক। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা মূলত রোগীর জন্য অপেক্ষা করছেন। রোগী আসলে ধারাবাহিকভাবে একজন একজন করে রোগীর ট্রলি টেনে আনেন। অনেক সময় ২ থেকে ৩ জনের প্রয়োজন হয়। তখন সংঘবদ্ধভাবে কাজ শেষ করেন তারা। এই কাজের বিনিময়ে রোগীর স্বজনরা যা বকশিস দিয়ে থাকে তাই নিয়ে খুশি থাকেন তারা। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। রোগীর ট্রলি টানার জন্য তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দাবি করেন। তাদের মনঃপুত না হলে রোগী নামান না টলি থেকে। কিংবা বেডে রোগী নামিয়ে দিয়ে আসেন না। রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এতে করে একপ্রকার বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা টাকা দিয়ে চলে যান।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, জরুরি বিভাগে যারা ডিউটি পালন করে তাদের এক একজনের প্রতিদিন প্রায় হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। সে তুলনায় তার আয় কম। সে ওয়ার্ডের ভিতরে দায়িত্ব পালন করে। কথা বলার সময় তার পকেটে সরকারি ওষুধ দেখা গেল। প্রতিদিন কেমন টাকার ওষুধ নেন হাসপাতাল থেকে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহর কিরে মামা আমি ওষুধ নিয়ে বিক্রি করিনে। এ ওষুধ তোমার মামির জন্য নিছি।
সূত্র বলছে, জেনারেল হাসপাতালে যারা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে তারা সরকারি কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে ওষুধ বিক্রি করে থাকে। এই ওষুধগুলো গেটে চা পান খেতে আসার সময় তারা বাইরে থাকা তাদের লোকদের কাছে রেখে যায়। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবকের অনেকে বিভিন্ন নেশার সাথে জড়িত। যে কারণে বাড়তি টাকার প্রয়োজন থেকে তারা রোগীদের পকেট কাটছে।
এ বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মিডিয়া সেলের প্রধান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী বলেন, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মত স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ ভাগ করা থাকে। কোন ওয়ার্ডে কে কাজ করবে কত জন করবে এটা আগে থেকে নির্ধারণ করা থাকে।
স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি জানান, যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চায় তারা প্রথমে আবেদন করেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবাধয়ক একটি কমিটি গঠন করেন। যদি লোকবলের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন যাচাই বাছাই করে লোক নেয়া হয়। পরিচয় পত্রে মেয়াদ না থাকার বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিষয়টা দেখা হবে।