স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দ্বোগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এই কার্যক্রম সরকারিভাবে গ্রহণ করা হলেও তা ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। সময়মত ডাক্তার রোগী না দেখার কারণে দূর দূরন্ত থেকে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে শেষমেশ অনেক রোগী ছুটছেন বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলোতে।
শনিবার সরেজমিন যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ঘুরে দেখা গেছে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন। টিকিটের দায়িত্বরত ব্যক্তি ও ডাক্তারের সহকারীর কাছে বারবার খোঁজ নিচ্ছেন কখন ডাক্তার আসবেন আর কখন তাদের দেখবেন। রোগীর ছদ্মবেশে ডাক্তারের জন্য বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর শোনা গেল ডাক্তারের সহকারীদের খোশ গল্প। বহিঃবিভাগের ১১৩ নম্বর কক্ষের সামনে ৩ থেকে ৪ জন সহকারী বসে খোশ গল্প করে বলছেন ‘আমার স্যারের ৫ টা রোগী ৭ মিনিটে দেখা হয়ে যাবে।’ একটু পরেই বহিঃবিভাগের গেট দিয়ে একজন মহিলা ডাক্তার প্রবেশ করলেন। প্রবেশ পথে টিকিটের দায়িত্বরত ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেল ‘এই সামনের দিন আমার অফ রেখো। কেউ জানতে চাইলে বলবা ঢাকায় গেছি।’
এই দিন বিকেল ৪ টা বেজে ৪৫ মিনিট অবধি একজন ডাক্তারকে চেম্বারে দেখা গেছে। অথচ বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য ৫ জন ডাক্তার দায়িত্বরত বলে জানা গেছে। বহিঃবিভাগের ১১১ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব পালনে নাম দেখা গেছে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বিকাশ চন্দ্র পাল, ১১৩ নম্বর কক্ষে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নিলুফার ইসলাম, ১১৫ নম্বর কক্ষে সিনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ডা. মো. শফিউল্ল্যাহ সবুজ, ১১৬ নম্বর কক্ষে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আফসার আলী ও ১২২ নম্বর কক্ষে অর্থো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আ,ন,ম বজলুর রশীদ। এই সময় ৫ জন ডাক্তারের মোট ৯ জন রোগীকে টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে দেখো গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় শুধুমাত্র সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তারের ফিস ৪০০ টাকা। এছাড়া বাকি ডাক্তারদের ফিস ৩০০ টাকা করে। রোগী দেখার সময় বিকেল ৩ টা থেকে। টিকিট দেয়া শুরু হয় দুপুর আড়াই টা থেকে যা বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলে।
আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ বিকেল ৩ টা থেকে রোগী দেখার কথা থাকলেও ডাক্তার আসেন না সময়মত। সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা না দিয়ে তারা বেসরকারি ক্লিনিকে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখে সময় পার করেন। টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে হয়। সহকারীদের কাছে ডাক্তার কখন আসবে জানতে চাইলে বলেন, একটাই ডাক্তার এসেছেন, ওয়ার্ডে রোগী দেখতে গেছেন। বেশি জোরাজুরি করলে খারাপ ব্যবহার করেন।
খাজুরা থেকে ডাক্তার দেখাতে আসা ইদ্রিস আলী বলেন, বিকেল ৩ টা থেকে রোগী দেখা শুরু হয়। আমরা ৪ টার দিকে এসেছি। ৩০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে বসে আছি। ৫টা বেজে গেছে ডাক্তার আসার কোনো খবর নেই। দূর-দূরন্ত থেকে ডাক্তার দেখাতে এসে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসে বসে আছি। এখনও দেখাতে পারিনি। অপেক্ষা করছি। শুনলাম ডাক্তার এসেছেন দেখি কখন ডাক পড়ে।
এ বিষয়ে জানার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন আর রশিদ ও জেলা সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসানের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন কল রিসিভ করেননি।