বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মী পিয়াল হাসান হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার রাতে খুলনার চুকনগর ও ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন, মোবারকপুর গ্রামের কামারুল ইসলামের ছেলে ঝিকরগাছা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক (সদ্য বহিস্কৃত) শামীম রেজা ও একই এলাকার নজরুল ইসলাম নজুর ছেলে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা মেহেদী হাসান।
মঙ্গলবার সকালে র্যাব-৬ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. রাসেল জানান, ‘গত ৯ নভেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে যুবদল কর্মী পিয়াল হাসান ঝিকরগাছা বাজারে কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পৌর শহরের মিতালী হলরোড এলাকায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্য বোমা নিক্ষেপ করে আসামিরা। এ সময় পিয়াল প্রাণ বাঁচাতে ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করলে সেখানে আসামিরা দা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিয়ালের গলা, হাতে পায়ে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে মামলাটি নিয়ে ছায়া তদন্তে নামে র্যাব-৬ সদস্যরা। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করে অভিযান পরিচালনা করে।
ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. রাসেল জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি শামীম রেজা ঢাকার উদ্দেশ্য পালানোর জন্য খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে যায়। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা মেহেদী হাসান ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও মূলত ছাত্রদল নেতা শামীমের পরিবারের সঙ্গে নিহত পিয়ালের সঙ্গে পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। বাকি আসামিদের আটকে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে সোমবার সকালে বেনাপোল সীমান্ত ও মোবারকপুর গ্রাম থেকে আরো দুই আসামি গ্রেফতার করে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ঝিকরগাছা বাজারে আধিপত্যের বিস্তার নিয়ে পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজার সঙ্গে যুবদলের কর্মী পিয়াল হাসানের বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে পিয়ালের নেতৃত্বে কয়েকজন শামীমের বাবা কামরুল ইসলামকে ছুরি মেরে জখম করেন। ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পিয়ালসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। দেড় মাস কারাভোগ করে গত ৮ নভেম্বর জামিনে মুক্ত হন তারা। পরদিন ৯ নভেম্বর পিয়াল ঝিকরগাছা রেলস্টেশন এলাকায় শামীমের কাছে গিয়ে ওই ঘটনার জন্যে মাফ চান। এ সময় শামীম তার সহযোগীদের মুঠোফোনে ডেকে পিয়ালকে ধাওয়া দিয়ে বোমা মেরে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহত পিয়াল হাসান ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর বিশ্বাসপাড়া এলাকার কিতাব আলীর ছেলে। তিনি ঝিকরগাছা বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন। তার চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এই ঘটনায় ঘটনার দিন রাতে নিহত পিয়ালের বাবা কিতাব আলী বাদী হয়ে ঝিকরগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ঝিকরগাছা পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক শামীম রেজাসহ ১০ জনের নাম পরিচয় উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে উপজেলা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম রেজার সম্পৃক্ততার অভিযোগে শামীমকে বহিস্কার করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। গত ৯ নভেম্বর রাতে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।