হাসান আদিত্য
যশোরে গত অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ১শ ৭ টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয় ২ লাখ ৩১ হাজার ১শ ৪৩ টন। গত অর্থ বছরের তুলনায় এবছর উৎপাদন বেড়েছে ৯ হাজার ৯শ ৬৪ টন। যার কারণে গত কয়েকবছর ধারাবাহিকভাবে খুলনা বিভাগে মাছ চাষে সেরা হয়েছে যশোর। এদিকে, প্রতিবছর চাহিদার চেয়েও তিন গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করছেন এ জেলার চাষিরা। পুকুর থেকে শুরু করে বিল, বাঁওড়, নদী ও খালে জলশস্য মাছের ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ করছেন। জেলায় বার্ষিক মাছের চাহিদা ৭০ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন। সেখানে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ৭১ হাজার ১০৭ মেট্রিক টন। চাহিদার উদ্বৃত মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় বছরে মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৪শ’ ০৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চিংড়ি মাছ রয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ২শ’ ১৮ মেট্রিন টন। এই বিভাগে মাছ উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে মেহেরপুর জেলা। সেখানে মাছ উৎপাদন করা হয় ৮ হাজার ৮শ’ ৭৫ মেট্রিক টন। বাগেরহাট জেলায় বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩শ’ ৭৩ মেট্রিন টন, চুয়াডাঙ্গায় ১৬ হাজার ৯শ ৫৪ মেট্রিন টন, ঝিনাইদহে ৩৮ হাজার ৮শ’ ৭৬ মেট্রিন টন, খুলনায় ১ লাখ ১০ হাজার ৯৫ মেট্রিন টন, কুষ্টিয়ায় ৩২ হাজার ২শ’ ০২ মেট্রিন টন, মাগুরায় ১৩ হাজার ৮শ’ ৪৫ মেট্রিন টন, নড়াইলে ১৪ হাজার ২শ’ ৬৬ মেট্রিন টন এবং সাতক্ষীরায় মাছ উৎপাদন হচ্ছে এক লাখ ৩১ হাজার ৮শ’ ৭১ মেট্রিন টন।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাছ উৎপাদনে যশোর স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবছর জেলাটিতে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন করা হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ১শ ০৭ টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয় ২ লাখ ৩১ হাজার ১শ ৪৩ টন। জেলায় ২২ প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রুই মাছ উৎপাদন হয়। গত বছর রুইমাছ উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার ৮শ ৭০ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন। কাতল মাছ ১৪ হাজার ৩শ ৯৮ মেট্রিক টন, মৃগেল ২৫ হাজার ৯শ ৯৯ মেট্রিক টন, সিলভারকার্প ৪১ হাজার ৫শ ৫২ মেট্রিক টন, পাঙ্গাস মাছ ১১ হাজার ৭শ ৮১ মেট্রিক টন, তেলাপিয়া ২০ হাজার ৭শ ৯৩ মেট্রিক টন, অন্যান্য ছোট মাছ ৫ হাজার ৯শ ৯০ মেট্রিক টন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুব্রত মন্ডল জানান, এখানকার মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত। যে কারণে ভালো মানের মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। যশোরের মৎস্য চাষি আবু হাসান জানান, তিনি ৩২ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন করে আসছেন। ৩০ বিঘা জমির উপর তার মৎস্য ঘের রয়েছে। এর মধ্যে পাবদা মাছ বছরে রফতানি হয় ৪০ মেট্রিক টন।
এদিকে, প্রতিবছর চাহিদার চেয়েও তিন গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করছেন এ জেলার চাষিরা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, স্থানীয় চাহিদার যোগানের পরও উৎপাদনের উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১ লাখ ৭০ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন। আট উপজেলার ১৭ হাজার ৫৬১ চাষি এখানকার মাছ চাষবাদ ও আহরণের সাথে সম্পৃক্ত। এ ছাড়া মাছের ডিম প্রক্রিয়াজাত করে রেনু ও ধানী পোনা উৎপাদন করছে জেলার ৪৪টি হ্যাচারি। জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতি সমবায় লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর এসব হ্যাচারিতে প্রায় এক লাখ কেজি রেনু ও ধানী পোনা উৎপাদিত হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র আরো জানায়, যশোরে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় রুই জাতীয় মাছ। এর পরিমান এক দশমিক ৬১ লাখ টন। পাশাপাশি ৭০ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন তেলাপিয়াসহ পাঙ্গাস, কৈ, শিং, মাগুর, গুলশা ও পাবদা মাছ উৎপাদন হয়। চিংড়ি উৎপাদন হয় ১০ হাজার ১৪ মেট্রিন টন।
সূত্র মতে, জেলায় ৩৩টি কার্প জাতীয় মাছের হ্যাচারিতে বাৎসরিক ৭০ দশমিক ২২ মেট্রিক টন রেনু উৎপাদিত হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ৫১ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন সারা দেশে সরবরাহ হয়। ৪ হাজার ৩২৭টি কার্প জাতীয় মাছের নার্সারিতে উৎপাদনের পরিমাণ ২১ হাজার ৩৪২ দশমিক ৬৮ লাখ। ৯টি তেলাপিয়া হ্যাচারিতে ৮১০ লাখ পোনা উৎপাদিত হয়। গত অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৬ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন মাছ রপ্তানি হয়। যার দাম দু কোটি ৭২ লাখ ১২ হাজার ৮৪৬ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া আমদানি হয় ২৩ হাজার ১১ মেট্রিক টন মাছ। যার মুল্য ৭৭ লাখ ২৪ হাজার ২৪৭ মার্কিন ডলার।
জেলা মৎস্য অফিসার সরকার মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানান, গত তিন বছরে জেলায় চাহিদার তুলনায় ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে। মাছ উৎপাদনে খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোর প্রথম স্থানে রয়েছে। প্রতিবছর জেলাটিতে মাছ উৎপাদন বাড়ছে। বছরে বেনাপোল দিয়ে মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে প্রায় ৬০ লাখ কেজি। যার রফতানি মূল্য দেড় কোটি ডলার।