স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের র্যাবিস ও নবজাত শিশুর পেন্টা নামক প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে দীর্ঘদিন এই প্রতিষেধক সরবরাহ না থাকার কারণে দূর দূরন্ত থেকে আসা মানুষদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে প্রতিষেধক নিতে এসে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাইরের ফার্মেসি থেকে ক্রয় করে শরীরে পুশ করে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, ১৫ অক্টোবর থেকে হাসপাতালের র্যাবিস ভ্যাকসিন শূন্য হয়ে পড়ে। এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনের সরবরাহ করা হয়নি। ফলে কুকুর, বিড়ালের দাঁত ও নখের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীরা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন নিতে পারছেন না। রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালের বাইরে থাকা ফার্মেসি থেকে ৫০০ টাকা মূল্যে ভ্যাকসিন ক্রয় করে ব্যবহার করতে হচ্ছে। একটা র্যাবিস ভ্যাকসিনের ফাইল থেকে ৫ জন ব্যক্তির এক ডোজ করে প্রতিষেধক দেয়া যায়। অনেক রোগীরা খরচ বাঁচাতে সঙ্গ বদ্ধ ভাবে টাকা তুলে ভ্যাকসিন ক্রয় করছে দেখা যায়।
এদিকে, হাসপাতালটিতে নবজাতক শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধের জন্য দেওয়া পেন্টা নামক প্রতিষেধকেরও সংকট তৈরি হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে গেছে পেন্টা নামক এই প্রতিষেধক। ফলে শীতের মৌসুমের শুরুতে জন্ম নেওয়া নবজাতক শিশুরা এই প্রতিষেধক নিতে পারছে না। যশোর জেলার আটটি উপজেলাসহ আশে পাশের জেলা শহরের মানুষেরা তাদের নবজাতক শিশুদের ভ্যাকসিন দিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। দূর দূরন্ত থেকে শিশু সন্তান নিয়ে আসা এই সব মানুষদের ভোগান্তি বেড়েছে।
পেন্টা নামক এই প্রতিষেধক শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর বয়স যখন ৪২ দিন হয় তখন প্রথম ডোজ দিতে হয়। এর পর আড়াই মাস বয়সে দ্বিতীয় ডোজ ও সাড়ে তিন মাস বয়সে তৃতীয় ডোজ দিতে হয়। জেলা শহরে এই সব প্রতিষেধকের সংকট তৈরি হওয়ার কয়েক মাস আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে এই টিকাদান কার্যক্রম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি টিকা দান কার্যক্রমের সাথে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাদের সেবা সাধারণ মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারছেন না। ইউনিয়ন ও উপজেলায় প্রতিষেধক না পেয়ে জেলা হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। সেখান থেকেও ফিরতে হচ্ছে অনিশ্চয়তা নিয়ে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক নিতে আসা নয়ন দাস জানান, কুকুরের বাচ্চাকে খাবার দিতে গিয়ে তার হাতে কুকুরের নখের আঁচড় লেগেছে। হাসপাতালে টিকা নিতে এসে জানতে পারে বিনামূল্যে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর তার মত আরও চার জন রোগী র্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে আসে। তাদের সাথে সমন্বয় করে দোকান থেকে এক ফাইল টিকা কিনে পাঁচ জন নিয়েছেন। নার্সরা তাকে বলেছেন আরও দুই ডোজ টিকা দিতে হবে।
মণিরামপুর উপজেলা থেকে বাচ্চার প্রতিষেধক দিতে আসা আমেনা খাতুন বলেন, বাচ্চার টিকা দিতে এসে শুনি টিকা নেয়। উপজেলার সরকারি হাসপাতালেও টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। ৪২ দিন বয়সে যে টিকাটা দিতে হয় সেটা দিতে পারলাম না। এরপর বাচ্চার বয়স আড়াই মাস হলে একসাথে দুই ডোজ দিতে হবে। ছোট বাচ্চাদের এক সাথে বেশি টিকা দিলে জ¦র আসে, কান্নাকাটি করে। মা হয়ে বাচ্চার কষ্ট সহ্য করা যায় না।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহানাজ কানুন বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের কাছে বাচ্চাদের পেন্টা নামক প্রতিষেধক নেই। অনেকেই এসে টিকা দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন পেন্টা না নিয়ে ফিরছে। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য বাকি যে চারটা প্রতিষেধক দিতে হয় সেটার মজুদ আছে। এখন বেশি বিড়ালে কামড়ানো রোগী আসছে। তাদের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন র্যাবিস না থাকার কারণে বিনামূল্যে আমরা দিতে পারছি না। বাইরে থেকে কিনে আনলে আমরা দিয়ে দিচ্ছি।
টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জ নূরুল হক বলেন, মানুষের সেবা করা আমাদের কাজ। প্রতিষেধক না থাকার কারণে আমরা আমাদের কার্যক্রম পুরোপুরি চালাতে পারছি না। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক মানুষ টিকা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আশা করা যায় দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পেন্টা ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে। আশা করা যায় আগামি সপ্তাহের মধ্যে জেলার ভ্যাকসিন সংকটের সমাধান হবে। র্যাবিস কবে নাগাদ পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে।