# বেড ছাড়া খাবার মেলে না
# ওষুধ পাচ্ছেন না রোগীরা
স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চতুর্থতলার বারান্দায় চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন রহমত আলী (৫৫) নামে এক বৃদ্ধ। হাসপাতালের বারান্দায় থাকায় পশ্চিম পাশের খোলা অংশ দিয়ে ঝির ঝির করে ঠান্ডা বাতাস আসছে। ঠাণ্ডা বাতাসের হাত থেকে রেহাই পেতে স্ত্রীর জামা টাঙিয়ে রেখেছেন। কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন সারা শরীর। পাশেই বয়স্ক স্ত্রী বসে শীতে কাঁপছেন। শুধু রহমত আলী নয়। তার মত প্রায় শতাধিক ভর্তি রোগী হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে ঠান্ডা বাতাসে কষ্ট করছেন। কেউ কেউ বিছানা, বিছানার চাদর টাঙিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস মোকাবেলার চেষ্টা করলেও তার সুফল পাচ্ছেন না। শনিবার দুপুরে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন যশোরের আকাশে সূর্য দেখা যায়নি। শীতল বাতাসের সাথে মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছিটা পড়তে দেখা গেছে। তাপমাত্রা ছিলো সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশকি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৮৮ শতাংশ।
শীতের আগমনে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ হওয়া মানুষের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ বেশি। জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি। বেড না পাওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন অনেকেই। তবে যারা বেড বাদে বারান্দা কিংবা মেঝেতে চিকিৎসা নেন তারা পাননা সরকারি বরাদ্দের খাবার। অপরদিকে হাসপাতালে সরকারি ওষুধ সরবরাহও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ রোগী ও তার স্বজনদের।
হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৬৪ জন বাচ্চা। যারা অধিকাংশ জ্বর, সর্দিকাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ১০৯ জন রোগী। যেখানে নির্ধারিত বেডের সংখ্যা মাত্র ৩৬ টি। মহিলা রোগী রোগের ধরণ হিসেবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে যায়। মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৪৭ জন। যেখানে নির্ধারিত বেড মাত্র ৩৩টি। হাসপাতালটির ধারণ ক্ষমতার বাইরে বাড়তি রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা।
শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স পারুল বিশ্বাস বলেন, শীতের মৌসুমে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর চাপ যায়। অধিকাংশ শিশুর বুকের সমস্যার জন্য নাকে গ্যাস দিতে হচ্ছে। একজন শিশু সুস্থ হতে ৩ থেকে ৪ দিন লেগে যাচ্ছে।
নড়াইল সদর থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আলতাফ হোসেন বলেন, ছয় দিন আগে ভর্তি হয়েছি রক্তশূন্যতা সমস্যা নিয়ে। কয়েকদিন বেডে থাকার সুযোগ হয়েছে। বেড থেমে নামিয়ে দেয়। বেডে থাকার সময় খাবার দিত। এখন দিচ্ছে না। ডাক্তার আসে দেখে যায়। ওষুধপত্র সব বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
অন্য এক রোগীর স্বজন বলেন, ঠাণ্ডাজনিত কারণে তার চাচাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঠিকমত ওষুধ পাচ্ছে না। ঠাণ্ডায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও বারান্দায় শুয়ে ঠাণ্ডা ভোগ করতে হচ্ছে।
এদিকে, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে জ্বর এবং ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক অ্যামোক্সিসিলিন, পেটের সমস্যা যেমন গ্যাস বা অম্বল রোগের জন্য ডাইজেটিক সাপ্লিমেন্ট, পেটের অ্যাসিড বা গ্যাসের জন্য প্যানটোপ্রাজোল, পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন কাটাতে স্যালাইন, অ্যালার্জি সর্দি বা শ্বাসকষ্টের জন্য বিভিন্ন অ্যান্টি-হিস্টামিন, ব্যথা ও সর্দি-কাশি উপশমে ইবুপ্রোফেন, টিবির চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি-টিবি ওষুধ, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মেটফর্মিন বা ইনসুলিন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য হাইপারটেনশন ওষুধ( অ্যামলোডিপিন, লসারটান প্রভৃতি), পেটের পোকামাকড় বা পরজীবী সংক্রমণের জন্য অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধসহ রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের ওষুধ সরবরাহ করার কথা। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ নেই। ফার্মেসিতে ওষুধ নিতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছিলেন সুফিয়া বেগম নামে এক নারী। ফার্মেসি থেকে তাকে জানানো হয়েছে ডায়াবেটিসের ওষুধের সরবরাহ নেই।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ফার্মেসির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, তাদের কাছে ১৫ প্রকারের ট্যাবলেট, ৫ প্রকারের ক্যাপসুল, ১ প্রকারের সাসপেনশন, ১ প্রকারের চোখের ড্রপ, স্যালাইন ও ২ ধরনের ক্রিম সরবরাহ আছে।
স্টোর কিপার গৌতম কুমার সরকার বলেন, নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। সবকিছু এখনও গুছিয়ে উঠতে পারেননি। এখনও পর্যন্ত কোনো ওষুধের অভাব অনুভব করেননি। ওষুধ শেষ হলেই পরের দিন সেই ওষুধ পেয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অ.ন.ম বজলুর রশীদ জানান, শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ সময় ঠাণ্ডা এগিয়ে চলা। প্রয়োজনমত গরম কাপড় ব্যবহার করা উচিৎ। হাসপাতালে ওষুধের তেমন কোনো সংকট নেই। র্যাবিস ভ্যাকসিন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম।