বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দখল, দূষণে অস্তিত্ব সংকটে যশোর অঞ্চলের নদ-নদী। এরমধ্যে ৪টি নদ-নদীর পানিতে ভয়াবহ দূষণ শনাক্ত করেছে পরিবেশে অধিদপ্তর। পানিতে অস্বাভাবিক পরিমাণ ডিজলভ অক্সিজেন ও জৈব রাসায়নিক রয়েছে। ফলে এই পানিতে প্রাণির অস্তিত্ব রক্ষার সম্ভাবনা খুবই কম। দূষিত পানি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের পরীক্ষায় পানি দূষণের চিত্র উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদ-নদীর পানি দূষণ রোধ করতে না পারলে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে। স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ও জোয়ার-ভাটা চালুর মাধ্যমে নদ-নদী দূষণ রোধ করে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে যশোর জেলার ৭টি নদ-নদীর পানি পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। সংগৃহীত নমুনা পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষার ফলাফলে চারটি নদীর পানি দূষণের চিত্র উঠে এসেছে। পানিতে ডিজলভ অক্সিজেন (ডিও) মান মাত্রা ৫ বা ততোধিক ও জৈব রাসায়নিক অক্সিজেনের (বিওডি) মান মাত্রা ৬ বা এর কম থাকলে স্বাভাবিক বলা হয়।
পরীক্ষার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে, ভৈরব নদের যশোর শহরের দড়াটানা পয়েন্টে পানিতে ডিজলভ অক্সিজেন (ডিও) মান মাত্রা ৩ দশমিক ৮১ ও ঢাকা রোড ব্রিজ এলাকার পানিতে ডিজলভ অক্সিজেন (ডিও) মান মাত্রা ৪ দশমিক ৬৯ পাওয়া গেছে। যা প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অপর্যাপ্ত। জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) মান দড়াটানা পয়েন্টে মানমাত্রা ৯ দশমিক শূণ্য ও ঢাকা রোড ব্রিজ পয়েন্টে বিওডি মানমাত্রা ১০ দশমিক শূণ্য পাওয়া গেছে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।
বেতনা নদীর শার্শা উপজেলার শার্শা ব্রিজ পয়েন্টের পানিতে ডিও মান মাত্রা ৪ দশমিক ১১ পাওয়া গেছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই সাথে জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) মান ৭ দশমিক শূন্য। যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কপোতাক্ষ নদের শার্শার মাঝামাঝি পয়েন্টের পানিতে ডিজলভ অক্সিজেন (ডিও) মান ৪ দশমিক ২৮। যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই সাথে বিওডি মান ৮ দশমিক শূণ্য। যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
মুক্তেশ্বরী নদের যশোর সদরের মাঝামাঝি পয়েন্টের পানিতে ডিজলভ অক্সিজেন (ডিও) মান ৪ দশমিক ২৭। যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই সাথে বিওডি মান ১০ দশমিক শূণ্য। যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। পরীক্ষায় আপার ভদ্রা, বুড়ি ভৈরব ও হরিহর নদীতে কোনো উল্লেখযোগ্য দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক এমদাদুল হক জানান, যশোর জেলার ১৯টি নদ নদীর মধ্যে ৮টির পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে চারটি নদ-নদীর পানিতে দূষণের মাত্রা অধিক চিহ্নিত হয়েছে। পানি দূষণের সঙ্গে পানিতে মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি আরও জানান, নদ-নদী দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে। সম্প্রতি ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে নদী দূষণের অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, জোয়ার ভাটার চালু থাকলে দূষণ কম অনুভূত হয়। আর যে সব নদ নদীতে জোয়ার ভাটা নেই, সেখানে দূষণের প্রভাব প্রকট আকার ধারণ করে। দূষণ কমিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
এদিকে, রোববার নদী রক্ষা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম জানান, নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নদী পাড়ে অবস্থিত বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সতর্ক করতে হবে। তারা যেন নদীতে বর্জ্য না ফেলে। নদ-নদীর স্বাভাবিক গতি ফেরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন তিনি।