- অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে সপ্তাহে দুইদিন অভিযান
শেখ জালাল
যশোর পৌর এলাকায় ইজিবাইক কিংবা রিকশার সংখ্যা খাতা-কলমে যতটা, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি চলাচল করছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় শহরে বাড়ছে যানজট। যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগও। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী। যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে ট্রাফিক বিভাগ ও পৌরসভা উদ্যোগ নিলেও সুফল মিলছে না। চলতি জানুয়ারি মাসে ইজিবাহক ও রিকসার লাইসেন্স নবায়নের তাগিদ দিলেও সাড়া মিলছে না। পৌরসভার লাইসেন্সধারী যানবাহনের সংখ্যা সাত হাজার ৭৬৮টি। চলতি মাসের ১২ দিনে মাত্র দুইশ’ লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে।
জানা যায়, যশোর পৌর এলাকায় সাত হাজার ৭৬৮টি যানবাহন চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে ইজিবাইক চার হাজার ৪৭৮টি, রিকশা দুই হাজার ৯৯০টি ও স্মার্ট রিকশা ২৪টি রয়েছে। এছাড়া ভ্যান রয়েছে তিনশ’ টি। বাস্তব শহরে দ্বিগুণ যানবাহন চলাচল করছে। শহর ঘুরে দেখা গেছে, শহরের রাস্তাগুলোর ধারণ ক্ষমতা চেয়ে দ্বিগুণ ইজিবাইক, প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। এছাড়া, অনটেস্টের মোটরসাইকেল চলছে দেদারছে। ট্রাফিক পুলিশের জোরদার অ্যাকশান না থাকায় মোটরসাইকেল আরোহীরাও মানছেন না কোনো নিয়ম কানুন। কিশোররাও এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় যানজটে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় স্থবির অবস্থায় দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে ট্রাফিক পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে। যানজটের প্রভাব পড়তে দেখা যায় জেল রোড, মুজিব সড়ক, গাড়িখানা রোড ও মাইকপট্টি এলাকাজুড়েই। শহরের দড়াটানা মোড়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মোড়, আইনজীবী সমিতির মোড়, মণিহার এলাকা ও উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ শহরের জেল রোড ও ঘোপ নওয়াপাড়া রোড অংশে ব্যাপক যানজট থাকে। হাসপাতাল মোড় হচ্ছে বর্তমান সময়ের সর্বাধিক যানজটপূর্ণ এলাকা। যানবাহনের ভিড়ে রোগী কিংবা অ্যাম্বুলেন্স ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারে না হাসপাতালে। হাসপাতাল মোড় থেকে কুইন্স হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, হাসপাতাল মোড় থেকে দড়াটানা মোড় পর্যন্ত উভয় পাশে প্রায় ৫০০ মিটার সড়ক পার হতে কখনো কখনো ১৫ মিনিট আবার দড়াটানা মোড় হতে চিত্রার মোড় পর্যন্ত ১০মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়। শহরের চৌরাস্তা, মণিহার, আরএন রোড, বড়বাজার ঘুরে একই ধরনের চিত্র দেখা যায়।
আইজীবী সহকারি মিটু বর্মন বলেন, যশোর শহর এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কোর্ট মোড়ে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
পথচারি গুলজার হোসেন বলেন, রাস্তায় এখন নিয়ম কানুন কিছুই মানা হচ্ছেনা। যে যার মতো ইচ্ছে চলাচল করছেন। পথচারি তানিয়া আজগার অভিযোগ করেন, বর্তমানে শহরে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলেন, ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহের প্রায় সব দিনেই এখন শহরে তীব্র যানজট দেখা যায়। তারা অভিযোগ করেন, ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। মূলত মামলা ও জরিমানা না হওয়ায় তাদের দৌরাত্ম বেড়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
পৌরসভার সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক মনজুর হোসেন রতন বলেন, যশোর শহরে বৈধ ইজিবাইক রয়েছে চার হাজার ৪৭৮টি। রিকশা রয়েছে দুই হাজার ৯৯০টি। ভ্যান রয়েছে তিনশতটি। প্রতিবছর জানুয়ারি মাস ধরে লাইসেন্স নবায়ন চলে। তবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র দুইশটি ইজিবাইক, ৭০ টি রিকশার লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিটি ইজিবাইকের নবায়ন ফি তিন হাজার টাকা, রিকশা, ভ্যান ৩০০ টাকা।
যশোরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাফুজুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যশোর ট্রাফিক পুলিশের। ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। আগের চেয়ে ট্রাফিক পুুলিশের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। তবে রোববার ও বৃহস্পতিবার গাড়ির চাপ বেশি থাকে। নিবন্ধনবিহীন অবৈধ যানবাহন আটকে অভিযান চলছে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহমেদ বলেন, যশোর শহরের যানজট নিরসনে কার্যক্রম শুরু করেছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক ও অটো রিক্সা আটকেও অভিযান চলছে। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন অভিযান চলবে।