বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) দুজন অধ্যাপক ও একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। বরখাস্তরা হলেন-অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিইসি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব এবং ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের রিসার্চ অফিসার (চলতি দায়িত্ব) ও টেকনিক্যাল অফিসার হেলালুল ইসলাম। এর মধ্যে অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পদত্যাগী ভিসি ড. আনোয়ার হোসেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তারা দুজনেই ভিসি আনোয়ারের অনিয়ম দুনীর্তি সহযোগী ছিলেন বলেই ক্যাম্পাসে ‘দুই খলিফা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এদিকে, আলোচিত অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিবের বহিস্কার নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে। অপরদিকে, তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সামনে আসছে জোরালোভাবেই।
পৃথক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়াদ মো. গালিবের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে দুর্নীতি ও অসাদাচরণের গুরুতর অভিযোগ থাকায় গত ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের ১০৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যবিপ্রবি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাধারণ আচরণ, শৃঙ্খলা ও আপিল সংক্রান্ত ধারা মোতাবেক শাস্তি আরোপের ভিত্তি থাকায় বিধি-১৫ (১) অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। অপরদিকে, যবিপ্রবির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাধারণ আচরণ, শৃঙ্খলা ও আপিল সংক্রান্ত বিধি মোতাবেক হেলালুল ইসলামকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
এদিকে, প্রফেসর গালিবের বরখাস্ত আদেশকে অবৈধ দাবি করে গত শুক্রবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিইসি) বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধারণা, গালিবের এই বরখাস্তের পেছনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইন্ধন রয়েছে। এ নিয়ে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। তার বহিস্কার নিয়ে ছাত্রদের দুটি পক্ষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
এক পক্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের অনিয়ম, র্দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পর সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেন। এক পর্যায়ে তার আরেক সহযোগী ‘প্রভাবশালী’ প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদও ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু বহাল তবিয়তে ছিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তাদেরকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের সব ধরণের অনিয়ম, দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গালিব। যেকোন অপরাধ, দুর্নীতি ও অনিয়ম ‘জায়েজ’ করতে কিংবা কাউকে ফাঁসাতে যত কমিটি গঠন হয়েছে তার অধিকাংশের প্রধান করা হত ড. গালিবকে। ভিসির ইচ্ছামাফিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতির বৈধতা দিতেন। ২০২২ সালে ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪টি লিফট ক্রয় করা হয়। দরপত্রের স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে ‘মেশিনরুম টাইপ’-এর পরিবর্তে ‘মেশিনরুম লেস টাইপ’ এবং ‘ডোর সাইজ’ ও ‘মোটর পাওয়ার’ কম ১৪টি লিফটের মালামাল সরবরাহ করা হয়। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন ও তার সহোযোগীদের বিরুদ্ধে। ওই লিফট ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিবের বিরুদ্ধেও। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর হাইকোর্টে রিট হয়। হাইকোটের নির্দেশে অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এছাড়াও সৈয়দ মো. গালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হওয়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অমান্য করে নিজের স্ত্রী ডা. নুসরত জাহানকে ৩৫ বছর ১১ মাস বয়সে বিধি বহির্ভুতভাবে নিয়োগ দেন। সম্প্রতি প্রফেসর সৈয়দ মো. গালিবের বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় প্রফেসর সৈয়দ মো. গালিবসহ তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব বলেন, সাময়িক বহিস্কারের চিঠি পেয়ে অবাক হয়েছি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই বহিস্কারের চিঠি হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। যা বাংলাদেশের আইনেরও পরিপন্থী।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কোন অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছি। কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। কর্তৃপক্ষ আমাকে যে কাজ দিয়েছে, আমি করেছি। লিফট ক্রয় সংক্রান্ত টেণ্ডার প্রক্রিয়ায় আমি জড়িত ছিলাম না। আমি যে কমিটিতে ছিলাম, সেটা একার কমিটি নয়। আরও অনেকেই ছিলেন। তাছাড়া ওই কমিটি ছিল সর্বশেষ ধাপের। স্ত্রীর চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। পরীক্ষা দিয়েছে, কর্তৃপক্ষ তার নিয়োগ দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মজিদ বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রাথমিক প্রমাণিত হয়েছে। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় সকলের সিদ্ধান্তে, দুই শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
শিরোনাম:
- নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ না হলে জাতির জন্য মহাদুর্যোগ দেখা দেবে : গোলাম পরোয়ার
- ‘ইরান খুব শিগগিরই আধুনিক প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করবে’
- যশোরের ৬ আসনে কোমর বেঁধে মাঠে জামায়াত
- অবশেষে কাটলো যশোরে করোনা পরীক্ষা কিট সঙ্কট
- কারাগার থেকে রাতারাতি মাদক নির্মূল সম্ভব নয় : অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক
- মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দল-মত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে : অধ্যাপক গোলাম কুদ্দস
- সুরবিতানে কবিতা আবৃত্তি
- সপ্তাহে একটি বই পড়ি’র নতুন অফিস ও সাহিত্য পাঠচক্র উদ্বোধন