বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সারাদেশের প্রত্যেক জেলার একটি নদ-নদীকে বিশেষভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ওই পরিকল্পনায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান নদ ভৈরবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ ভৈরব নদের সাথে চিত্রা, কপোতাক্ষ, হরিহর, বেতনাসহ শাখা নদী ও খালসমূহের সংযোগ রয়েছে। ভৈরব-মাথাভাঙা নদী সংযোগ দিয়ে নদের প্রবাহ বজায় রাখা জরুরী। এতে পশ্চিমাঞ্চলের নদী, খাল, সুন্দরবন রক্ষা, মোংলা পোর্টের নাব্যতার সমস্যা, জলাবদ্ধতা, সমুদ্র উপকূলীয় সমস্যা ও নদী পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাণ-প্রকৃতি, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।
ফলে সরকারের নদ সংরক্ষণের বিশেষ তালিকায় ভৈরবকে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি।
মঙ্গলবার যশোর শহরের নীলরতন ধর সড়কের অস্থায়ী কার্যালয়ে ভৈরব, মুক্তেশ্বরী, ভবদহ, কপোতাক্ষ নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ভৈরবের শাখা নদী মুক্তেশ্বরী। এ নদী হরি, শ্রী, তেলিগাতী, গাংরাইল নামে প্রবাহিত হয়ে রূপসা-শিবসা ধারায় মিলিত হয়ে সাগরে পড়েছে। এই নদীর উজানে ভৈরবের পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। এতে মুক্তেশ্বরীর উৎপত্তিস্থল থেকে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সলুয়া বাজার পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। সেখান থেকে যশোর সদরের পুলেরহাট পর্যন্ত অবৈধ দখলদারের দৌরাত্ম ও ব্রিজের নামে কালভার্ট নির্মাণে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নদীকে হত্যা করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে পুলেরহাটে আদ-দ্বীন হাসপাতালের নামে নদী তট আইন লঙ্ঘন শুধু নয়, নদীগর্ভ দখল ও ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছে। দখলের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদকে তারা তোয়াক্কা করেনি। বর্তমানে নদীর উপর দুই পাড় কংক্রিট ঢালাই করে সংকীর্ণ কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও নদী রক্ষা কমিশনের কোন ভূমিকা নেই। নদীর দখল হওয়ায় যশোর সেনানিবাসও জলাবদ্ধতার শিকার হতে পারে। একই সাথে ভবদহ সংকটাপন্ন এলাকার সমস্যা সমাধানে মুক্তেশ্বরী নদীর অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এদিকে, তীব্র গণআন্দোলনের চাপে দুই দফায় কপোতাক্ষ নদ সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কার কাজে নানা অনিয়ম হয়েছে। মানা হয়নি নদী তট আইন। বর্তমানে নেট-পাঁটা দিয়ে কচুরিপানায় নদীকে বদ্ধ করে ফেলেছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। এ সমস্যা সমাধানে পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভবদহ সমস্যা সমাধানে টিআরএম প্রকল্প চালুর জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত যেকোন একটি বিলে পলি ব্যবস্থাপনার আওতায় টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। সংশ্লিষ্ট বিলে ভূমিহীন, মৎস্যজীবী, ভূমি মালিক, ঘের মালিকদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের কাজ দ্রুত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য নদী ড্রেজিং ও সকল স্লুইসগেট সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাম্প মেশিনে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। ওই এলাকার ৬০ থেকে ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল হয়নি। এ বিষয়ে আগামী ১৯ এপ্রিল প্রেসক্লাব যশোরে আন্দোলনকারী সংগঠনসমূহের যৌথ প্রতিনিধি সভায় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, সরকার প্রত্যেক জেলার একটি করে নদী দখল, দূষণমুক্ত ও সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে যশোরের কেশবপুরে আপার ভদ্রা নদীর সাড়ে ১৮ কিলোমিটার দখল, দূষণমুক্ত করে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা পিলার স্থাপন করে সংরক্ষণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তেশ্বরী হাসপাতালের দখলে থাকা নদীর জমির প্রাচীর ও কালর্ভাট অপসারণের সতর্ক করা হয়েছে। তারা নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সম্মত হয়েছে। মাথাভাঙার সঙ্গে ভৈরবের সংযোগ না থাকায় এ অঞ্চলের নদ-নদীর প্রভাব নেই। কপোতাক্ষ নদ সংস্কারের পর অবৈধ দখলদার নেই। ভৈরব নদের শহর অংশের ১০ কিলোমিটার অংশ ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক রনজিৎ বাওয়ালি, মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শুকুর আলী, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা হাসিনুর রহমান, তসলিম-উর-রহমান প্রমুখ।