# পরীক্ষার্থী কমার অন্যতম কারণ ‘পরীক্ষাভীতি’
# আজ থেকে ২৭ দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরে এবার অংশ নিচ্ছে এক লাখ ৪১ হাজার ৬৪ জন। যা গত বছর ছিলো এক লাখ ৬২ হাজার ৭২৬জন। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ২১ হাজার ৬৬২জন। শুধু তা-ই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এবার কেন বিপুল সংখ্যক পরীক্ষা কমে যাওয়ায় সেটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোপাস, আন্দোলন-ধর্মঘটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা ছুটি থাকায় প্রস্তুতির অভাব ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পরীক্ষাভীতি থাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। শিক্ষার্থীদের পাঠমুখী করে ভীতি কাটিয়ে উঠতে হবে। নইলে সংকট আরও বাড়বে। বৃহ্সপতিবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমামানের পরীক্ষা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের সবপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বোর্ড।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিএম জুলফিকার আব্দুল্লাহ বলেন, অটোপাসের কারণে ছেলে-মেয়েরা পড়ার টেবিল থেকে সরে গিয়েছিল। তাদের আর পড়ার টেবিলে ফেরানো যায়নি। একই সাথে রাজনীতি, আন্দোলন, ধর্মঘটে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে।
পড়াশুনা বাদে তারা অন্য কাজে বেশি মনোযোগী হয়েছে। এজন্য তাদের প্রস্তুতির অভাব দেখা দিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরীক্ষাভীতি চেপে বসেছে। এজন্য অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসছে না। শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে ঝরে পড়ার হার বাড়তেই থাকবে।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আবদুল মতিন বলেন, ‘প্রতি বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম বেশি হয়। তবে এবছর বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী কমেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- দীর্ঘদিন পরীক্ষা না দিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়াতে শিক্ষার্থীদের ভিতর পরীক্ষা দেয়ার মনোভাব খুবই কম। ছেলে-মেয়েদের প্রস্তুতির অভাব ও পরীক্ষাভীতির কারণে পরীক্ষার্থী কমেছে। যা আমাদের ভাবাচ্ছে।’
জানা যায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের দুই হাজার ৫৭০টি বিদ্যালয়ের এক লাখ ৪১ হাজার ৬৪ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ছেলে ৬৯ হাজার ৮৫ ও মেয়ে ৭১ হাজার ৯৭৯ জন। নিয়মিত পরীক্ষার্থী এক লাখ ২৮ হাজার ৬৫৮ ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ১২ হাজার ২৮৬। বিজ্ঞান শাখায় পরীক্ষার্থী ৪০ হাজার ১৪৪জন, মানবিক শাখায় পরীক্ষার্থী ৮৫ হাজার ২৩৮জন ও ব্যবসায়ী শিক্ষা শাখায় পরীক্ষার্থী ১৫ হাজার ৬৮২জন। সুষ্ঠু, নকল মুক্ত ও প্রশ্ন ফাঁস মুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ১৩টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। গঠিত ভিজিলেন্স টিমের সদস্যরা নির্ধারিত দিনে কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শনের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। তারা পরিদর্শন করবেন বোর্ডের আওতাধীন ২৯৯টি পরীক্ষা কেন্দ্র।
মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ নির্দেশনা : আজ বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে এবার শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা, যা শেষ হবে (তত্ত্বীয় পরীক্ষা) ১৩ মে। এরপর ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত ব্যাবহারিক পরীক্ষা চলবে। এবারের এসএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলার তিন ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। আর কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন, এমন কেউ চলাচল করতে পারবেন না। এসএসসি-সমমান পরীক্ষার শুরুর দিন ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘সাধারণত কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে শুধু পরীক্ষার তিন ঘণ্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকে। তবে কেন্দ্রভেদে এ দূরত্ব কমবেশি হতে পারে। কেন্দ্রের আশপাশে কতটুকু জায়গা ১৪৪ ধারার অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। পরীক্ষা চলার সময়ে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্য কেউ ওই লাল পতাকা অতিক্রম করে কেন্দ্রের কাছে যেতে পারবেন না।’
এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে আয়োজনে ওই পরিপত্রে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই পরিপত্রটি সব বিভাগীয় কমিশনার, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সব জেলা প্রশাসকদের পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর নির্দেশনা : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রফাঁস-সম্পর্কিত গুজব ও নকলরোধে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব অপরাধ করলে পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।