# বোরো মৌসুমেও ধান ক্রয় নিয়ে শঙ্কা
# কৃষক ঝামেলায় যেতে চায় না
এস এম জালাল
যশোরে আমন মৌসুমে ধান ক্রয় ব্যর্থ হয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকর দপ্তর। আমন মৌসুমে ৯ হাজার ৭১৯ টন ধান কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ২২ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। সরকারি গুদামে ধান বিক্রি ঝামেলার হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের। এবার বোরো মৌসুমে ধান ক্রয় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষকরা বলছে, বোরো মৌসুমে সরকার ধানের যে দাম বেঁধে দিয়েছে তার চেয়ে বেশি দামে বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়। পরিবহনের একটা খরচ আছে। সময়ও বেশি লাগে। বাড়ি থেকে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। কোনো খরচও নেই। দামও ভালো। ফলে কোন ঝামেলায় কৃষক যেতে চায় না।
আমন মৌসুমে সরকারের ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রতি কেজি ধান ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ দামে কৃষক সাড়া না দেয়ায় এ বছর বোরো সংগ্রহে দাম তিন টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বছর ৩৬ টাকা কেজি দরে বোরো ধান কিনবে সরকার। উৎপাদন খরচ গত বছরের চেয়ে দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে বিবেচনায় নিয়ে ফসলের দাম কেজিতে তিন টাকা করে বাড়িয়েছে সরকার। কৃষকরা জানান, যশোরের স্থানীয় বাজারগুলোতে ধানের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি থাকায় এবারও ধান সংগ্রহ ব্যর্থ হবে।
জেলার হাটবাজারে নতুন ধান এক হাজার ৪৪০ টাকা থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি হচ্ছে।
গুদামে ধানের নির্ধারিত দাম এক হাজার ৪৪০ টাকা মণ। গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, শ্রম ও ব্যয় বেশি। এ জন্য কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ নন।
যশোরে কেশবপুরের বরণডালি গ্রামের কৃষক মফিজুর রহমান বলেন ‘সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়। তা ছাড়া পরিবহনের একটা খরচ আছে। সময়ও বেশি লাগে। বাড়ি থেকে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। কোনো খরচও নেই। দামও ভালো। এ জন্য গুদামে ধান বিক্রি করিনি। আর গুদামে টাকা পেতে দেরি হয়।
মণিরামপুর উপজেলার পাখাজুরা গ্রামের কৃষক আবুল বিশ্বাস জানান, এবার তিনি ২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার কারণে ধান ঘরে তুলতে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তবে জমির সব ধান কাটা শেষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। এ ধান বাড়ি থেকে বিক্রি করে দেবেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ধান এখনও ভাল শুকনা না। খাদ্য অফিসে যে দাম বাজারে সেই দাম। পরিবহন খরচ করে ঝামেলায় যাব না। তিনি বলেন, এ ধান নিয়ে গেলে ধানের আদ্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তাই বাজারে বিক্রি করাই ভাল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষকদের একটি করে কৃষি কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় ও আবাদ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব আছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেয়া হয়। কৃষক ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেন।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর, শার্শা, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মণিরামপুর, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে ও ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ধান কেনা হবে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেফাউর রহমান বলেন, যশোরে চিকন ধানের চাষ বেশি হয়। কিন্তু সরকারিভাবে কেনা হয় মোটা ধান। চলতি আমন সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া খাদ্যগুদামগুলো কিছুটা দূরে হওয়ায় ধান পরিবহনে কৃষকের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, সময়ও বেশি লাগছে। এ জন্য খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে চাষিরা আগ্রহী ছিল না। তবে এবার বোরো মৌসুমে সরকার ধানের দাম প্রতিকেজিতে তিন টাকা বাড়িয়েছে। ফলে এ বছর ধান সংগ্রহের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ধান আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হবে।