# ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবরা
# পরীক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে না: পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
প্রশ্নে কোনটির উত্তর নেই! আবার কোনটির উত্তর একাধিক। আবার কোনটির প্রশ্ন ভুলে ভরা অসংলগ্ন। চলমান এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোর। ইংরেজির মত বিষয়ে ভুলেভরা প্রশ্নে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা। বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকরাও। তবে প্রশ্নে ভুল থাকলে শিক্ষার্থীদের নম্বর নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শ বোর্ড সংশ্লিষ্টদের।
বোর্ডসূত্রে ও পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ ও ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় এসএসসির ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। এরপর গত ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া তাহমিনা খাতুন নিজেকে পরীক্ষার্থী দাবি করে চিঠি দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর। ঠিকানাবিহীন ওই চিঠিতে পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের নানা অসংগতি নিয়ে। ভুলে ভরা, এক প্রশ্নের একাধিক উত্তরসহ নানা অসংগতি নানা চিত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয় ওই চিঠিতে। ইংরেজি প্রথম পত্রে ওই শিক্ষার্থীর দাবি প্রশ্নে পত্রের ১ এর প্রশ্নে চারটি উত্তরের মধ্যে চারটি সঠিক। একই প্রশ্নের f নাম্বারে Outskirts দুটি উত্তর দেয়া হয়েছে। ৬ নাম্বার প্রশ্নের টেবিলে Defends দেওয়া হয়েছে। সেখানে সঠিক উত্তর হবে defend। প্রথম পত্রের মতো ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ১ নাম্বার প্রশ্নে welfare flourishment দুটোই সঠিক। একই দাগের এইচ নাম্বারে educations লেখা হয়েছে। যার সঠিক উত্তর educations ২ নাম্বারে ডি প্রশ্নে in life এর জায়গায় in them হবে। এছাড়া ৪ নাম্বারে Right from verb প্রশ্নটি এসএসসি স্তর থেকে উচ্চতর স্তর মানের করা হয়েছে। এছাড়া দুটি পত্রেই বিভিন্ন জায়গায় অসংলগ্ন গ্র্যামারের প্রয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে হিমশিম খেয়েছেন তারা। ভুলে ভরা প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণে পরীক্ষার কাক্সিক্ষত ফলাফল নিয়েও দুশ্চিন্তায় তারা। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও জিলা স্কুলের কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, ‘নিয়ম হলো প্যাসেজের গল্পের সঙ্গে মিল রেখেই ১ নাম্বারের প্রশ্নগুলো হবে। সেখানে অধিকাংশ প্রশ্ন প্যাসেজের সঙ্গে মিল ছিলো না। কিছু কিছু প্রশ্নে গ্র্যামারের ভুল করেছে। কোন কোন প্রশ্নের চারটি উত্তর সঠিক, কোনটার একটাও উত্তর নেই। এসব প্রশ্নে উত্তর দিতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে আবার সময়ও অপচয় হয়েছে। প্রায় সকল শিক্ষার্থীর ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। ফলাফল নিয়ে চিন্তিত। আমরা ভাবছি, এগুলোর মার্কস কিভাবে দিবে?
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া অভিযোগের প্রশ্ন দুটি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় যশোরের স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। দুটি প্রতিষ্ঠানের চারজন ইংরেজি শিক্ষকদের দেখানো হয় প্রশ্ন। প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বেশির ভাগই সত্যি বলে দাবি করেছেন তারা। ২৭ বছর ধরে ইংরেজি বিষয়ের উপর পাঠদান করা যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক খালিদ হোসেন বলেন, ‘ইংরেজি প্রশ্ন দুটি দেখেছি। কিছু কিছু প্রশ্ন মাধ্যমিক স্তর মানের হয়নি। অনেকটা কঠিনও হয়েছে। কিছু কিছু প্রশ্নে গ্র্যামার ভুল ছিলো। যেখানে শব্দের সঙ্গে s হবে না, সেখানে s দেয়া হয়েছে। কোনটা চারটি উত্তর দিয়েছে। প্রশ্ন প্রণয়ণে আরও সর্তক হওয়ার দরকার ছিলো সংশ্লিষ্টদের।
যশোর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) এমএ পিয়াস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের লেভেল অনুযায়ী কিছু প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু কিছু প্রশ্ন প্রিন্টিং মিস্টেক বা ভুল হয়েছে। তাই ফাইনাল প্রিন্টিংয়ের আগে আরও একবার রিচেক দেয়া উচিত। দরকার হলে একাধিক ব্যক্তি এই রিচেক দেয়া যেতে পারে। তাহলে এ ভুলের সংখ্যা কমে যাবে বা থাকবে না।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন প্রণয়নকারী শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানিয়েছে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, ‘তথ্যটা নিয়ে আমরা পর্যালোচনা শুরু করেছি। পরীক্ষার্থীরা যে প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের প্রধান পরীক্ষক প্রস্তুত করেছে। ভুল প্রশ্ন হলে আমরা তাদের সেভাবে মার্কস দিতে সিদ্ধান্তের কথা জানাবো। আতংকিত না হওয়ার পাশাপাশি ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা হলে কোন শিক্ষার্থীই নাম্বার থেকে বঞ্চিত হবেন না বলে আশ্বস্ত করেন এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোসাম্মাৎ আসমা বেগম।
যশোর বোর্ড থেকে এবারের এসএসসিতে অংশ নিয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৬৪ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্রে অংশ নেয় এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৬২ জন পরীক্ষার্থী।