বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়নে অসঙ্গতি তুলে অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে হট্টগোল করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত সি ক্যাটাগারির জুলাই যোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে ‘ভুয়া আহত’দের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষেয় ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্র নেতারা। চেক বিতরণের সময় ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দেন দালালি না রাজপথ, রাজপথ…। জাবির ট্রাজেডিতে নিহত সবাই শহিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সেটি নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন। একই সাথে আহতের তালিকা প্রণয়নের স্বজনপ্রীতি ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তোলা হয়।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার সময় যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হোসাইন সাফায়েত, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান কবীর বাবু, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান প্রমুখ। জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম যশোর জেলার সি ক্যাটাগরির ৬৬জন জুলাইযোদ্ধার প্রত্যেককে এক লাখ টাকার অনুদানের চেক প্রদান করেন।
চেক প্রদানের আগে শহিদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়নে অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে বক্তব্য ও স্লোগান দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তাদের স্লোগানে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। কোন বিবেচনায় শহিদ ও আহতদের তালিকায় নাম যোগ ও বিয়োগ হয়েছে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখা দাবি করেন ছাত্ররা।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব মারুফ হাসান সুকর্ণ বলেন, জুলাইযোদ্ধার তালিকায় নূর ইসলাম নামে একজনকে আহত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু সে কোথাও আহত হয়নি। এমন অন্তত ১৫ থেকে ২০জনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা কোনভাবেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলে না। এদেরকে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তি জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মামুন লিখন বলেন, যশোর জেলায় ৬৬ জন আহতকে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ তালিকার অনেকেই দেখছি, যারা কোনভাবে আন্দোলনে আহত নয়। তাদেরকে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে মানতে পারছি না। তালিকা প্রণয়নে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। যারা জুলাইযোদ্ধা তাদের সঙ্গে কোন ভুয়া যোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত হোক, এটা চাই না। অবিলম্বে যাচাই বাছাই করে প্রকৃত জুলাইযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে যশোর জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, আমরা যারা আন্দোলন করেছি তাদের প্রায় সবাই কোন না কোনভাবে আহত হয়েছি। কিন্তু সি ক্যাটাগরির তালিকায় যাদের নাম দেখছি, তাদের অধিকাংশই আহত নন। আমরা তো আহতের তালিকায় নাম তুলি নাই। তালিকা যাচাই বাছাই করা উচিত।’
জুলাই বিপ্লবে শহিদ ও আহত যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য ও ছাত্রপ্রতিনিধি মেজবাহুর রহমান রামীম বলেন, শুধু যশোরে আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকায় অন্তভূক্ত করা হয়নি। যশোরের বাইরে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। আমরা সেই তালিকা যাচাই করেছি।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, জেলার শহিদ ও আহতদের তালিকা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। ওই তালিকা জেলা যাচাই বাছাই কমিটি যাচাই করেছে। আমরা তালিকা প্রস্তুতি করিনি। যাচাই বাছাই কমিটিতে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল। তারা সরেজমিনে যাচাই বাছাই করেছে। তারপরেও তালিকায় অসঙ্গতি থাকতে পারে। ছাত্রদের নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের সুযোগ আছে।’