বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে সেবাগ্রহীতার ভোগান্তি বেড়েছে। খতিয়ান সংগ্রহ, নামজারি ও খারিজ আবেদন, জমির ভুল সংশোধন, হোল্ডিং নম্বর সংশোধন কিংবা জমির উন্নয়ন কর দিতে হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ। হয়রানির শিকার মানুষ ঝুঁকে পড়ছে দালাল চক্রের খপ্পরে। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষের হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র।
ভুক্তভোগীরা জানান, একটি নামজারির আবেদন করতে প্রথমে কম্পিউটার দোকানে গিয়ে আবেদন লিখতে হচ্ছে। এরপরে জমির সমস্ত কাগজপত্র একত্রিত করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাচাই করার জন্য জমা দিতে হয়। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবেদন জমা দিতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। নানা অজুহাতে সেখানে সময়ক্ষেপণ করা হয়। আবার অনেক সময় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদেরও পাওয়া যায় না। যাও বা কোন রকম যাচাই হলো। দৌঁড়াতে হচ্ছে কম্পিউটারের দোকানে অনলাইন আবেদন করতে। সেখানে সময় ব্যয় করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। তারপরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবারও জমা দিতে হচ্ছে। তারপরেও সেখানের কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং অশোভন ব্যবহারের মুখোমুখি সাধারণ মানুষ। যশোর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে রয়েছে আরেক জটিলতার কাজ। বেশির ভাগ নামজারির প্রায় দেড় মাস পরে শুনানির তারিখ পড়ে। ভুক্তভোগিরা শুনানির এসএমএস বা খবর ২ থেকে ৩ দিন আগে এমনকি একদিন বা সেই রাতে পাচ্ছে।
তারপরেও সাধারণ মানুষ তাদের জমির কাগজপত্র সঠিক করার জন্য শুনানিতে উপস্থিত হতে হয়। কিন্তু সভা কিংবা অনুষ্ঠানের অজুহাতে সহকারী কমিশনার থাকেন গরহাজির।
ভুক্তভোগি শহিদুল ইসলাম জানান, নামজারির জন্য আবেদন করছি। প্রথমে আবেদন করার পর যে আইডি হয়ে থাকে তা কয়েকদিন পর অনলাইনে খুজে পাওয়া যায়নি। স্যার বলে নতুন করে অনলাইনে আবার আবেদন করতে। সেই অনুযায়ী আবারও আবেদন করছি। যার শুনানিও হয়েছে। শুনানিতে স্যার বলছে কয়েকদিনের মধ্যে অনলাইনে ফি জমা দিয়ে নামজারি পর্চা উঠাবেন। অথচ ১৫-২০ দিন পরে আবারও স্যারের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে জানায় চলে যান হয়ে যাবে। তারপরেও না হলে আবারও যখন অফিসে স্যারের নিকট আবেদন নম্বর দিলে বলে নামঞ্জুর করা হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ ভাই। আবেদন করছি দু’বার সেখানেও বেশ টাকা লাগে। আবার দলিলের মূল নকল দেয়া হয়েছে। দলিল উঠাতেও দু’ হাজার টাকা।
আব্দুল মুমিন জানান, জমির বিষয়ে যশোর সদর উপজেলার ভূমি অফিসে ৪ বার আসছি কোন সমাধান হয়নি। আমি বয়স্ক মানুষ আসলেই শুধু ডেট দেয়। আজও সেই সকালে আসছি। দুপুর পার হয়ে গেছে কিন্তু ভিতর থেকে ডাকছে না। এখানেও কি কোন সিস্টেম আছে।
আরেক ব্যক্তি জানান, নামজারির আবেদন করছি। যায় হোক মাস খানিক পরে শুনানির জন্য মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠায়। যে রাতে ম্যাসেজ দেয় পরের দিনে শুনানি। ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। দু’দিন পরে গিয়ে দেখি স্যার পরীক্ষার ডিউটিতে। আবার দুই তিন দিন পরে গেলে অফিস থেকে বলে স্যার ঢাকায়। পরের দিন গেলে নিচের একজন হলে এ আবেদন তো নামজারি হয়ে গেছে। আপনি টাকা জমা দিয়ে নামজারির কপি তুলে নেন। পরে গ্রামে এসে কম্পিউটারের দোকানে টাকা জমা দিতে গিয়ে দেখি আবেদনটি আবারও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করেছে। সেখানে গেলে তারা বলে আমাদের আইডিতে আসেনি। অথচ আজকে এ বিষয়ে স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসছি। স্যার তো নেই। অফিসের সবাই বলছে স্যার আজকে আসবে না।
আব্দুল খালেক জানান, আমি নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করছি। অথচ কয়েকদিন পরে দেখি অনলাইনে আমার আইডিটা নেই। কোনভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ আবেদনের সাথে আমার দলিলের মূল নকল দেয়া রয়েছে। এখন আমি কিভাবে এ ফাইল খুজে পাবো।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যশোর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার বলেন, ভূমি অফিসে যেকোন বিষয়ে মানুষের ভোগান্তি হওয়ার সুযোগ নেই। নামজারির আবেদন খারিজ হলে তা রিভিউ করার সুযোগ আছে।