বাংলার ভোর প্রতিবেদক
৫০ বছর বয়সী চন্দনা রানী বিশ্বাস। তার স্বামী সুব্রত বিশ্বাসকে আট বছর আগে হারানোর পর থেকেই সংগ্রাম করে আসছিলেন। একমাত্র ছেলে পলাশ কুমার বিশ্বাস এবং ছোট মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসকে নিয়ে তার জীবন। কিন্তু পুলিশে কর্মরত ছেলে পলাশের প্রতারণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই বিধবা নারী। হারাতে বসেছেন জীবনের শেষ সম্বলটুকু।
চন্দনা রানী বিশ্বাসের অভিযোগ ছেলে পলাশ কুমার তাকে না জানিয়ে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পলাশি গ্রামে গড়ে তোলা একটি একতলা বাড়ি বিক্রি করেছেন, এখন বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপও দিচ্ছেন। এই বাড়িটিই তার একমাত্র সম্বল। অন্যদিকে ছেলে পলাশ কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, টাকার প্রয়োজনে নিজের নামে থাকা জমিসহ বাড়ি তিনি মায়ের সম্মতিতেই বিক্রি করেছেন। মাকে নিতে চান নিজের কাছে।
জানা যায়, সদর উপজেলার সাতমাইল শাহবাজপুরে ১ বিঘা জমি ছিল চন্দনা রানীর। ছেলের পুলিশের চাকরির জন্য সেই জমি থেকে ১০ শতক বিক্রি করেন তিনি। এরপর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আরও ২০ শতক জমি বিক্রি করে যশোরের পলাশিতে ৪ শতক জমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। এই বাড়িটিই ছিল তার শেষ আশ্রয়স্থল।
চন্দনা রানী বলেন, পলাশ আমার অজ্ঞাতে পলাশিতে থাকা বাড়িটি সাড়ে ৩৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন পলাশ বাড়ি বিক্রি করে আমাকে বাড়ি থেকে নেমে যেতে বলছে। আমার যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। যেই ছেলেকে ছোট থেকে বড় করেছি, আজ সেই ছেলেই আমাকে দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, এই বয়সে আমি বৌয়ের ঝাটালাঠি খেয়ে বাঁচতে পারবো না। হয় সে আমাকে নতুন জায়গা দেবে, না হলে আমার টাকায় করা বাড়ি আমাকে ফেরত দেবে। এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন চন্দনা রানী।
এদিকে, পলাশের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন তার ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসও। প্রিয়াঙ্কার দাবি, তার স্বামী উজ্জ্বল কুমার সরকারের কাছ থেকে পলাশ ৩ লাখ টাকা ধার নিয়েছিল, যা নিয়ে এখন তাদের মধ্যে তীব্র বিবাদ চলছে। এঘটনায় পলাশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছে উজ্জল কুমার সরকার। কোন কিছুতে সমাধান না হওয়ায় প্রিয়াঙ্কাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি মায়ের সাথে পলাশির ওই বাড়িতে থাকেন। এই টানাপোড়েনের শিকার হচ্ছে প্রিয়াঙ্কার ১২ বছর বয়সী মেয়েটিও।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পলাশ এই ঘটনার পর থেকে নিরুদ্দেশ। তার খোঁজ কেউ জানে না এবং পরিবারের সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। একমাত্র ছেলের এমন অমানবিক আচরণে দিশেহারা চন্দনা রানী বিশ্বাস এখন পথে বসার উপক্রম। এই পরিস্থিতিতে তার এবং তার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এদিকে মায়ের এমন অভিযোগের বিষয়ে পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, টাকার প্রয়োজনে আমি বাড়ি বিক্রি করেছি। তাছাড়া জমির মালিক আমি। মায়ের সাথে প্রতারণা কেন করবো! বরং তিনি নিজেই বাড়ি বিক্রির জন্য লোক খুঁজে এনেছিলেন। এখন অন্য কারও প্ররোচনায় পরে তিনি এমন অভিযোগ করছেন।
পলাশ কুমার আরও বলেন, আমি বারবার মাকে বলেছি, তুমি ঢাকায় চলে আসো। এখানে আমাদের সাথেই থাকবে। কিন্তু তিনি আসতে রাজি হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমি বলেছি, তাহলে বাড়ি ছেড়ে দেও। তবে ছোট বোনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। বর্তমানে পলাশ কুমার বিশ্বাস ঢাকা মেট্রোপলিটনে পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন।