বাংলার ভোর প্রতিবেদক
শ্রেণি কক্ষে পাঠদানরত অবস্থায় ২০১৭ সালে ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ে যশোরের মণিরামপুরের পাড়িয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন থেকে। তখন উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন ভবন নির্মাণের উদ্দেশে ২০২০ সালে পরিত্যক্ত ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়া দেওয়া হয়েছে। এরপর বিদ্যালয়ে আর নতুন ভবন নির্মিত হয়নি। সেই থেকে কাঠের বেড়া আর টিনের চালার ছোট্ট তিনটি ঘরে চলে বিদ্যালয়টির পাঠদান।
মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পাড়িয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিনের পর দিন কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। একসময় বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১১০ জন শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে সেখানে ৭০ জন শিক্ষার্থী আছে বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক রেশমা খাতুন। যদিও সরেজমিন বিদ্যালয়টিতে পঞ্চম শ্রেণিতে ৫ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৮ জন ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৭ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে পাড়িয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের এক পাশে পরিত্যক্ত ভবন ভাঙ্গার চিহ্ন রয়েছে। একপাশে ছোট্টছোট্ট তিনটি টিন ও কাঠের তৈরি শ্রেণি কক্ষে চলছে পাঠদান। মাঠ জুড়ে রয়েছে কাদা। যেখানে নেই শিশুদের খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ। এসময় কথা হয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সিনথিয়া বলেন, আমাদের স্কুলে ভবন নেই। আমাদের পড়তে খুব কষ্ট হয়।
একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আল মুসলিম আলিফ বলেন, আমাদের স্কুলে ভবন না থাকায় যেখান সেখান থেকে পানি পড়ে। আমরা ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারি না।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধানত ভবন ও প্রাচীর গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার্থীদের বসার উপযুক্ত স্থান বা পাঠদান করাতে হলে ভবন দরকার। পাশাপাশি তাদের পারিপার্শ্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রাচীর দরকার। আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে পাকা সড়ক। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া এই টিনের চালা আর কাঠের বেড়ায় গরমের সময় যেমন গরম অনুভূত হয় তেমন শীতের সময় প্রচণ্ড শীত। আর ঝড় হলে তো কোন কথায় নেই, স্কুল ছেড়ে পালাতে হয়। বাচ্চাদের নিয়ে পাশের কোন ছাদের নীচে আশ্রয় নিতে হয়। বর্তমানে এই সময় এসে পাঠদান বা গ্রহণ কোনটাই এমন পরিবেশে কাম্য না।
পাড়িয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেশমা খাতুন বলেন, ২০১৭ সালে পাঠদান চলাকালীন বিদ্যালয়ের এক তলা ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধ্বসে পড়ে। ২০২০ সালে ভবন পরিত্যক্ত দেখিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এরপর টিনের চালা ও কাঠের বেড়ার শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে আমাদের স্কুল চালাতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ক্লাস নেয়া যায়না। ভিতরে পানি পড়ে। গরমে টিনের চালা উত্তপ্ত হয়ে ক্লাসে টিকা যায় না। ঝড় শুরু হলে অভিভাবকরা এসে স্কুল ছুটি দিতে বলেন। এমন অবস্থায় বিদ্যালয়ের পাশের অন্য কোন ভবনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ২০১৮ সালে বিদ্যালয়ে ১১০ জন শিক্ষার্থী ছিল। ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীরা আশপাশের ভবনযুক্ত স্কুলে যেয়ে ভর্তি হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থী কমে ৭০ জনে পৌঁছুছে। ভবনের জন্য একাধিক বার লোকজন এসে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে যাচ্ছেন। আজও ভবন পাইনি।
মণিরামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু মুত্তালিব আলম বলেন, পাড়িয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিনের চালার ঘর। কোন ভবন নাই। মণিরামপুরে মাত্র এই একটা প্রতিষ্ঠানে যেখানে ভবন নেই। আমি একাধিকবার ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছি। শুনেছি, একবার ভবন পাশ হয়েছে। কোন এক জটিলতার কারণে ভবন হয়নি। আমরা চাই, দ্রুত এই বিদ্যালয়ে একটি ভবন হোক।