♦ শহর যানজটমুক্ত করতে অ্যাকশন প্লান
♦ অবৈধ ক্লিনিক ও মাদকের বিরুদ্ধে চলবে অভিযান
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা। জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে বেড়েছে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা। একই সাথে মাদকের বিস্তার ও চাঁদাবাজি চলছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় অপরাধ দমনে আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় যশোরে শহরের যানজট, অবৈধ স্থাপনা, নিবন্ধনহীন যানবাহন ও ক্লিনিক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানার সঞ্চালনায় সভায় জেলার অপরাধ চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয় আগস্ট মাসে জেলায় খুন, ধর্ষণ, সিঁধেল চুরি, অন্যান্য চুরি, মামলা বেড়েছে। কমেছে দস্যুতা, গাড়ি চুরির মত ঘটনা। জুলাই মাসে ৬জন খুন, ৭জন ধর্ষণের শিকার হয়। আগস্ট মাসে খুন হয়েছে ৭জন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১টি।
সভায় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, সামনে আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। আমাদের প্রথম কাজ হবে রাস্তা ঠিক রাখা। পুরাতন গাড়ি জব্দের বিষয়ে আমাদের অভিযান চলছে। সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আগামি ১৫ তারিখে ঝিকরগাছায় বড় একটা উচ্ছেদ অভিযান আছে। আমাদের সরকারি অফিসে যেই যোগ দিবেন তার বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য মাদক থেকে যুব সমাজকে বিরত রাখা। মাদক মামলার ক্ষেত্রে ফরওয়ার্ডরিং ও পিসিআর বাধ্যতামূলক করতে হবে। অবৈধ ক্লিনিকগুলো অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এছাড়া দোকানের সামনে কোনো ধরণের মালামাল থাকবে না। রাস্তা পুরোপুরি ক্লিয়ার রাখতে হবে।
সভায় মুক্ত আলোচনায় অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যশোরে আইনশৃংখলার অবস্থা ভালো। কিন্তু মাদকের প্রভাব বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে শহর ও শহরতলীর বিনোদন স্পটগুলোতে শিক্ষার্থীরা মাদক নিচ্ছে। তিনি অভিমানের সুরে বলেন, এরা কি কোনো পরিবারের নাকি এতিমখানার। স্কুল কলেজ চলাকালিন ডিসি অফিস, পৌরপার্কে ছেলেমেয়েরা বসে থাকে। কলেজের সময় শেষ হলে বাড়ি চলে যায়। এসব ছেলেমেয়েদের ধরে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও পিপি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা ৯০দিনের মধ্যে খারিজ করতে হয়। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার অভাবে আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নাশকতা মামলায় একই মামলায় একই আসামিকে দুই বার গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। যারা সমাজের জন্য হুমকি তাদের জেলের ভিতরে একটু বেশি সময় রাখা উচিৎ। কিন্তু পিসিআর এর অভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
আইন শৃংখলার বিষয়ে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ সামনে দুর্গাপূজা। দুই বছর আগের যশোরের চিত্র আর এখনকার চিত্র ভিন্ন। বাণিজ্যিকভাবে রিকসা ইজিবাইক তৈরি করে রাস্তায় নামানোর প্রবণতা বেড়েছে। এটা রোধে কোনা প্রক্রিয়া আছে কিনা দেখা দরকার। পূজার সময় যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কিশোর গ্যাং গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে ক্যারম বোর্ড খেলে সংগঠিত হচ্ছে । চাঁদাবাজি হচ্ছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। ফুটপাতে নিরব চাঁদাবাজি হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে কারা জড়িত সবাই জানে। এটার ব্যাপারে তৎপর হতে হবে। শব্দ দূষনেরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, শহরে যানজট এতটা প্রকট গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পার হওয়া যাচ্ছে না। মানবিক দিক বিবেচনা করে যানবাহন কমানোর জন্য চালকদের সাথে কথা বলে একটা কমিটি করা হোক।
জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম রসুল বলেন, গত বছর পূজার সময় আমরা কাজ করেছি। এবারও জামায়াত ইসলামী কাজ করবে। নির্বাচন সামনে রখে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বাঘারপাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। তাদের বিরেুদ্ধে প্রশাসন এখনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। নির্বাচন সামনে রেখে পেশাদার সন্ত্রাসীদের চাহিদা বাড়ছে। এসব সন্ত্রাসীদের আইনের আওয়াতায় আনতে হবে। যশোর শহরে দোকানের সামনে আরও দুটি করে দোকান বসানো। যানজট নিরসনে এসব উচ্ছেদ করতে হবে। গত মাসে হত্যা নারী নির্যাতন বেশি হয়েছে। এনব ঘটনা দ্রুত ভাইরাল হয়েছে।
যশোর চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, প্যাথলজি ব্যবসার সাথে আপোস করা যাবে না। এরা মানুষের জীবন মরণ নিয়ে খেলা করছে।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিচ্ছে না। যশোরে সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি মানে এমন কোনো কিøনিক নেই। ৮০ শতাংশ নির্দেশনা মানলেও মানা যায়। এসব ক্লিনিকগুলো বন্ধ করা কঠিন। একই প্যাথলজিস্ট একই সময়ে অনেকগুলো জায়গায় কাজ করে। যখনি আমরা অভিযান করে ক্লিনিক বন্ধ করি আমাদের কাছে ফোন আসে। মিটিং এ বক্তব্য দেয়া একটা জিনিস আর প্রাক্টিকাল করা একটা জিনিস।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল মোড়ের দোকানগুলো ফুটপাত দখল করে রাখছে। হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স এর চাপ। ব্যবস্থা নিতে গেলে তত্বাবধায়কের চেয়ার থাকবে না। আমরা কেন এভাবে মানুষকে ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছি।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, আপনারা মিটিং এ যানজট নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। আবার গাড়ি ধরলে আপনারাই কল করেন। যশোর পৌরসভার ৪ হাজর ৭শ গাড়ির অনুমোদন নেয়া আছে। এর বাইরে একটা গাড়িও চলবে না। ২০০২ সালের লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চলছে। কারো একাধিক লাইসেন্স থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আগামী ১০ দিন মাইকিং চলবে। ১১ দিনের মাথায় বাড়তি একটা গাড়িও পৌর এলাকায় ঢুকবে না। কোনো শর্ত দিলে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্ষার সময় বাল্ব কাটে। শহর আলোকিত করার বিষয়ে নেগেটিভ মন্তব্যও এসেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পৌর এলাকায় সাড়ে তিন হাজার বাল্ব লাগানো হবে। শহর আলোকিত না থাকলে অপরাধও বাড়ে। প্রতিনিয়ত তার চুরির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
শার্শার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিব হাসান বলেন, বেনাপোল বন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ভারত থেকে আসা ট্রাকগুলো কাস্টম অফিসাররা স্ক্যান না করে ছেড়ে দিচ্ছে। তারা সুযোগ থাকার পরও স্ক্যানিং করছে না। যে কারণে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের সাথে কি কি আসছে জানা যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, মিটিং এ আসলে আমরা আশাবাদী হই। মিটিং শেষে তেমন ফলাফল হয় না। প্রত্যেক মিটিং এ যে কোনো একটা বিষয় নজরে এনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বরেণ তিনি।
নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলার চার্জশীট নিতে দেরি হয় তার কারণ সিআইডি থেকে একটা ডিএনএ টেস্ট এর রেজাল্ট আসে। রাজনৈতিক মামলার আসামি অনেক হয়। গত মাস থেকে আমরা পিসিআর করছি। ৫ আগস্টের পর সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। শহরে নীরব চাঁদাবাজি হচ্ছে। ইয়াবা আসার পর মাদক নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মাদক কারবারিকে অর্থিকভাবে পঙ্গু করতে পারলে অপরাধ অনেকটা কমে যাবে। পেশাদার অপরাধীদের জামিন না দেয়ার বিষয়ে পিপিকে অনুরোধ করেন তিনি।