♦ আ.লীগের সাবেক এমপির ভাই কাজী ইনাম ফের জেডিএসএ সদস্য, ক্ষুব্ধ ক্রীড়া সংগঠকরা
♦ এক দশক বিসিবির পরিচালক থাকলেও নজর দেননি জেলার ক্রীড়াঙ্গনে
♦ প্রতিবাদে স্মারকলিপি ও অবস্থান কর্মসূচি আজ
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘ইনাম’ শব্দটির অর্থ পুরস্কার, বখশিশ বা উপহার। এটি ভালো কাজ কিংবা কাউকে খুশি করার জন্য দান করা হয়। যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটিতে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদের ভাই কাজী ইনাম আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম অ্যাডহক কমিটির সদস্য পেশাদার কোচ নিবাস হালদারকে বাদ দিয়ে ইনাম আহমেদকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় হতবাক হয়েছেন জেলার ক্রীড়া সংগঠকসহ ক্রীড়াপ্রেমীরা। প্রশ্ন উঠেছে কাকে খুশি করতে ইনাম আহমেদকে কমিটি রাখা হয়েছে। বইছে সমালোচনার ঝড়।
শুধু এবারই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও দুই মেয়াদে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন ইনাম। তখন যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের প্রভাবে বনে যান যশোর জেলার প্রতিনিধি হিসেবে বিসিবির পরিচালক। যশোর জেলার প্রতিনিধি হিসেবে বিসিবির পরিচালক হওয়ার পর প্রতিশ্রুতি দিলেও জেলার ক্রিকেট উন্নয়নে কোন অবদান রাখেননি। দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাইয়ের নির্বাচনের প্রচারণা আর নিজের দুটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছাড়া যশোরে ফিরেও তাকাননি তিনি। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পালিয়েছে ভাই কাজী নাবিল আহমেদ। তাহলে এবার কাকে খুশি করে পদ বাগিয়ে নিলেন কাজী ইনাম আহমেদ, এমন প্রশ্ন মানুষের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। কাউকে বিশেষ কায়দায় ম্যানেজ ছাড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার (জেডিএসএ) অ্যাডহক কমিটিতে স্থান পাওয়া আদৌ কি সম্ভব ?। কাজী ইনাম আহমেদের নাম প্রত্যহারের দাবিতে আজ যশোরের সর্বস্তরের খেলোয়াড়, সংগঠক জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি ও কালেক্টরেট চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন হবে।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশের সব বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি করার নির্দেশনা দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এ ঘোষণার প্রায় ছয় মাস পর গত ২২ জানুয়ারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক চিঠিতে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাণ ফেরাতে সাত সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। এ অ্যাডহক কমিটির পদাধিকার বলে আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক, ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে সদস্য মোহাম্মদ শফিকউজ্জামান, সাবেক ফুটবল ও হকি খেলোয়াড় হিসেবে এ জেড এম সালেক, কোচ হিসেবে শ্রীনিবাস হালদার, ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সামিউল আলম শিমুল, ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মাসুদ রানা বাবু, পদাধিকার বলে সদস্য সচিব জেলা ক্রীড়া অফিসার। সর্বশেষ ওই কমিটির একজনকে বাদ দিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর নতুন আরও তিনজনকে যুক্ত করে জেডিএসএ’র কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এ খবর রোববার রাতে যশোরে পৌঁছালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্রীড়া সংগঠকরা। তারা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এমন সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ।
এদিকে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য ব্যতিত কেউ বিসিবি’র প্রতিনিধি হতে পারবেন না। কিভাবে কাজী ইনাম আহমেদ অ্যাডহক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেন সেটি নিয়ে বিস্মিত যশোরের খেলোয়াড় ও সংগঠকরা।
ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোরের খেলাধুলার সাথে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না যশোর-৩ আসনের পলাতক সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদের ভাই কাজী ইনাম আহমেদ। তাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিতে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যশোরের ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকরা। আসন্ন বিসিবি নির্বাচনে ভোটার হওয়ার সুযোগ নিতেই ইনাম ‘বিশেষ উপায়ে’ অ্যাডহক কমিটির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।
যশোর ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাহাতাব নাসির পলাশ বলেন, সর্বশেষ দুই নির্বাচনে কাজী এনাম আহমেদ যশোরের প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর যশোরের ক্রীড়া সংগঠকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান ছাড়া স্থানীয় খেলাধুলার ব্যাপারে কোন খোঁজখবর রাখেননি। যশোরের ক্রীড়াঙ্গনে তার কোন অবদানই নেই। এমনিতেই যশোরে ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অদক্ষ সংগঠক ইনামকে এখানে যুক্ত করায় আরও নাজুক হয়ে পড়বে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক আকসাদ সিদ্দিকী শৈবাল বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এমন সিদ্ধান্ত যশোরের ক্রীড়ামোদীদের মর্মাহত করেছে। বিগত এক যুগের অধিক সময় ধরে কাজী ইনাম তার সাংসদ ভাইয়ের ক্ষমতাবলে বিসিবির যশোরের কাউন্সিলর পদ দখলে রাখায় জিম্মিদশায় ছিল জেলার ক্রীড়াঙ্গন। যশোরের খেলাধুলার সর্বনাশকারি সেই দখলদারকে ফের কমিটিভুক্ত করাটা গভীর চক্রান্তের অংশ।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কোষাধ্যক্ষ সোহেল মাসুদ হাসান টিটো বলেন, যশোরের ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস করতে কাজী ইনামকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাকে কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে, অন্যথায় আমরা তাকে বাদ দিতে বাধ্য করবো।
যশোর জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর দু’দফা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠিত হলো। কিন্তু কোনবারই এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সাথে জেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত রাখা হয়নি। নেয়া হয়নি কোন মতামত। বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়ে কমিটির কাজ চালানো জটিল হয়ে গেল।
আর আটমাস আগে গঠিত অ্যাডহক কমিটি থেকে বাদ পড়া ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব নিবাস হালদার বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিতে থেকে বাদ দেয়াটা অসম্মানজনক। তবে সবকিছু উপেক্ষা করেই ক্রীড়াঙ্গনের সাথে যুক্ত থাকবো। আর এই বিষয়ে কয়েক দফা কাজী ইনাম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।