♦ মণ্ডপে-মণ্ডপে রাজনৈতিক দলের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা
♦ আর্থিক অনুদান ও নিরাপত্তা সহায়তায় নেতাকর্মীরা সজাগ
প্রতীক চৌধুরী
এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুর্গাপূজা হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের রাজনীতির পাশাপাশি উৎসবে শামিল হয়েছে। মন্দির-মণ্ডপে সোহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আর্থিক অনুদান, মণ্ডপ পরিদর্শন, শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়ের মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলের ইতিবাচক কার্যক্রম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবর দুর্গাপূজা আয়োজনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, এ বছর যশোর জেলায় ৭০৮টি মন্দির ও মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে শার্শা উপজেলায় ২৯টি, ঝিকরগাছায় ৫৪টি, চৌগাছায় ৪৮টি, সদরে ১৬৫টি, বাঘারপাড়ায় ৯১টি, মণিরামপুরে ৯৭টি, অভয়নগরে ১২৬টি, কেশবপুরে ৯৮টি মন্দির। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। রাজনৈতিক দলের উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ স্থানীয় পূজা মণ্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কয়েক দফায় মতবিনিময় করছেন। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মন্দির-মণ্ডপে আর্থিক অনুদান ও সনাতন ধর্মাবলম্বী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীদের মাঝে শাড়ি বিতণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের পক্ষে সদর উপজেলার ১৬৫টি মন্দির মণ্ডপে আর্থিক অনুদান ও শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর পক্ষ থেকে কেশবপুরে ৯৭টি মন্দিরের মধ্যে ৫০টিতে আর্থিক অনুদান পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পূজা চলাকালীন বাকি মন্দিরে গিয়ে আর্থিক অনুদান তিনি পৌঁছে দিবেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা শাখার পক্ষে স্ব স্ব উপজেলা শাখা ও দলের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের মাঝে শাড়ি উপহার দেয়া হয়েছে। পূজা চলাকালে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা মন্দির ও মণ্ডপ পরিদর্শন করবেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। তারা সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিবেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে, আর্থিক অনুদান ও উপহার বিতরণের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। পূজা চলাকালে মন্দির মণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তায় রাজনৈতিক দলগুলোর সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারেন, সেজন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সার্বিক সহযোগিতাও করবে। ষষ্ঠী থেকে বিসর্জনের দিন পর্যন্ত সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে মাঠে থাকবে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা জামায়াত ইসলামীর প্রচার সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, শুধু এ বছরই নয়, বিগত কয়েক বছর যাবত আমরা দুর্গাপূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বী দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শাড়ি উপহার দিই। এবারও জেলায় প্রায় ৫ লাখ টাকার শাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা আমীরের নেতৃত্বে জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা আমীর ও মনোনীত প্রার্থীদের নেতৃত্বে মন্দির ও মণ্ডপ পরির্দশন করা হবে। কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সমাধান করবেন। আমরা মনে করি, সবাই বাংলাদেশী, যার যার ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজায় ফ্যাসিস্টদের চক্রান্ত থাকতে পারে। এজন্য আমরা সতর্ক আছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সেজন্য আমাদের দলের প্রত্যেকটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। ভোটের হিসেব নয়, আমরা মানবতার জন্য কাজ করছি। প্রত্যেকটি মন্দির কেন্দ্রিক নিরাপত্তার জন্য দলীয়ভাবে কমিটি করা হয়েছে। আমরা সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব সফল করতে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা পাচ্ছি। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যেক ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সামর্থ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আর্থিক অনুদান ও সহায়তা প্রদান করছেন। আশা করছি, পুজোর ৫দিন দলের শীর্ষ নেতারা মন্দির ও মণ্ডপ পরিদর্শনের মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সাহস ও উৎসাহ যোগাবেন।’