বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের চঞ্চল গাজী হত্যার ঘটনায় সাতজনের নামে মামলা হয়েছে। শুক্রবার
নিহতের মা হাসিনা বেগম সাতজনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। এই মামলায় ইতোমধ্যে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং বাকি দুইজনকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আসামিরা হলেন, ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়ার জামাল ওরফে কানা জামালের দুই ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৮) ও বিল্লাল হোসেন (৪০), রবিউলের ছেলে মুন্না (২০), কানা জামালের স্ত্রী ফুলি বেগম (৫০), শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ও বর্তমানে ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়ার আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাদ্দাম হোসেন (৩৮) ও তার স্ত্রী রূপালী বেগম (৩৫), এবং ভুট্টোর ছেলে আসিফ (২১)।
এজাহারে হাসিনা বেগম উল্লেখ করেছেন, তার ছেলে চঞ্চলের একটি ইজিবাইক দুই মাস আগে চুরি হয়। আসামি রবিউল ও বিল্লাল পেশাদার ইজিবাইক চোর এবং তারা নিয়মিত মাদক ব্যবসা করে। ইজিবাইক চুরির ঘটনায় রবিউলকে সন্দেহ করলে তার সঙ্গে চঞ্চলের তর্ক-বিতর্ক হয় এবং রবিউল চঞ্চলকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। গত ৯ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে বাড়ির সামনে রাস্তায় রবিউল, মুন্না ও সাদ্দাম মাদক কেনাবেচা করছিল। তখন তারা উচ্চস্বরে গালাগালি করছিল। চঞ্চলের বাবা মধু গাজী তাদের থামতে বললে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং পরে অন্য আসামিদের ডেকে আনে। এ সময় হাসিনা বেগম, তার স্বামী মধু গাজী, ছেলে চঞ্চল ও তুহিন এগিয়ে গেলে আসামিরা তাদের ওপর হামলা চালায়। ধারালো দা দিয়ে কোপাতে থাকে, এতে চারজনই গুরুতর জখম হন। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা। আহত চারজনকেই যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বেলা পৌনে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চঞ্চল গাজী মারা যান। হাসিনা বেগম ও তার ছেলে তুহিন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন, আর মধু গাজী এখনো হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
কোতোয়ালি থানার এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, আসামিদের মধ্যে রবিউল, মুন্না, বিল্লাল ও রূপালীকে আটক করা হয়েছে। রবিউল ও মুন্না পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, আর বিল্লাল ও রূপালীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিল্লাল একজন চিহ্নিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় চুরি ও ছিনতাইসহ পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে, চঞ্চল হত্যাকাণ্ডের পর ডাকাতিয়া এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিকেলে মরদেহ এলাকায় পৌঁছালে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত লোকজন রবিউলের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
গ্রামবাসীরা জানায়, চোর সিণ্ডিকেট ও মাদক ব্যবসায়ীদের এই ধরনের অপরাধ তারা আর মেনে নিতে পারছে না। এই চক্রের ভয়ে এলাকার মানুষ তটস্থ ছিল এবং কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। তাদের অভিযোগ, রবিউল ও বিল্লাল একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন জেল খেটে বের হয়ে আবারও চুরি ও মাদক ব্যবসা শুরু করে। ফলে অনেকেই তাদের প্রভাবশালী হিসেবে ভয় পেতেন। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।