বিবি প্রতিবেদক
ওরে (নাজমুল) গাড়ি চালাতে মানা করেছি। কয়েকদিন আগে গাড়ি থেকে ওকে নামিয়ে নিয়ে গেছি। শনিবার চুরি করে আবার গাড়িতে গিয়েছে। সন্ধ্যায় ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। আজ (রোববার) সকালে এসে ওর লাশ পেলাম। রেলগেট বন্ধ থাকলে আমার ছেলেকে এভাবে হারাতাম না। সব দোষ ওই গেটম্যানের। কথাগুলো বলতে গিয়ে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন নিহত নাজমুলের মা নাসিমা বেগম।
শুধু নাসিমা বেগম নয়, ট্রাকটির মালিক শাহীন হোসন ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদেরও একই অভিযোগ, রেলক্রসিং অরক্ষিত ছিল। ভুষিবোঝাই ট্রাকটি যখন রেলগেটটিতে ঢুকে পড়ে তখন ক্রসিংয়ের গেট ছিল খোলা। আর সে কারণেই খুলনাগামী রকেট মেল ট্রেনটির সামনে পড়ে ট্রেনের ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে উল্টে যায় ট্রাকটি। এ সময় ট্রাকের ভিতরে থাকা চালক ও হেলপার ঘটনাস্থলেই মারা যান। দুর্ঘটনার পর প্রায় তিন ঘণ্টা সড়কে যানজট ছিল। একই সাথে কিছু সময় রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
গতকাল ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে যশোর সদরের চূড়ামনকাটি রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে ওই রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান পলাতক। পুলিশ এবং স্থানীয়রা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, দুর্ঘটনার সময় ঘর কুয়াশাচ্ছন্ন ছিলো রাস্তা। ওই সময় গেটম্যান ঘুমিয়ে থাকায় তার দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের বাসিন্দা ট্রাক চালক পারভেজ হোসেন (২৬) ও মহেশপুর উপজেলার আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা হেলপার নাজমুল হাসান (২৮)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিলাহাটি থেকে খুলনামুখি রকেট মেল ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশ্য যাচ্ছিলো। ট্রেনটি যখন সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি রেল ক্রসিংয় পার হওয়ার সময় চৌগাছাগামী ভূষিবাহী (ঝিনাইদহ ট- ১১-১৬৬৭) একটি ট্রাক ট্রেনের সামনে চলে আসে। রেল ক্রসিংয়ের বার খোলা থাকায় ট্রাকটি ক্রসিংয়ে ঢুকে পড়ার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ট্রাকের হেলপার ও ড্রাইভার ঘটনাস্থলেই মারা যান। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে পুলিশ, সদর পুলিশসহ প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
চুড়ামনকাটি গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, গতকাল ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত ছিলো চারিপাশ। বাড়ির মধ্যে থেকে বিকট শব্দ শুনে রাস্তায় বের হয়ে দেখি রেল লাইনের পাশে উল্টে আছে একটি ট্রাক। ট্রাকটি দেখেই বুঝলাম ট্রেনের ধাক্কা খেয়েছে। কাছে যেয়ে দেখি ট্রাকের ভিতরে দুটি মানুষ। তারা দুজনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। এর পর পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিস এসে ট্রাকে থাকা ভূষি সরিয়ে ট্রেন লাইন পরিস্কার করে। আর নিহত দুইজনরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তিনি জানান, এই রেলক্রেসিংয়ে দায়িত্বে ছিলেন চুড়ামণকাটি দাসপাড়া এলাকার সজল কুমার। তিনি গেট লাগানোর দায়িত্ব পালন না করে ঘুমিয়ে থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
ট্রাক হেলপার নাজমুলের মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘ওরে ট্রাকে হেলপারি করতে নিষেধ করছি। তারপরেও আমার কথা না শুনে গাড়ি চালাতে আসে। শনিবার সন্ধ্যায় আমার ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। আর সকালে শুনি আমার ছেলে এই দুনিয়াতে নেই। আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘দোষ সব এই গেটম্যানের। যদি রেলগেটের বারটি নামাতো গেটম্যান, তাহলে আমার ছেলেটারে এভাবে জীবন দিতে হতো না। এতক্ষণ ছেলেটা আমার বুকে থাকতো। চার বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার একটাই ছেলে। এই ছেলেটা আমার সংসার চালাতো। এখন আমার কি হবে! আমার সব শেষে হয়ে গেছে। আমার আর কিছু নেই। ও নাজমুল রে…। তুই আমারে ফেলাইয়া কই গেলি রে..বাবা। আমার সংসারের কি হবে। নাজমুলের সংসারে কোন ছেলে মেয়েও নেই।
ট্রাকটির মালিক শাহীন হোসেন জানান, ‘শনিবার ঢাকার সিটি মিল থেকে আমারে ট্রাকে করে ভুষি নিয়ে আসছিলো। ভুষিগুলো দেয়ার কথা ছিলো চৌগাছার শফি স্টোরে। গেটম্যানের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রেন আসার আগে গেটের বারটি লাগানো থাকলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। গেটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমার দুই কর্মচারীর প্রাণ গেল। একই সাথে আমার ট্রাকটি দুর্ঘটনার শেষ হয়ে গেল।’ এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে যশোর সেনানিবাস ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা নাহিদ মামুন বলেন, ‘সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ভুষি বোঝাই ট্রাকটি উল্টে গেছিল তার সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আমরা স্পট ডেড হিসেবে ট্রাকের চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রেল লাইনের উপরে পড়া থাকা ভুষি পরিষ্কার করি। পরে পুলিশ এসে ট্রেকার দিয়ে ট্রাকটি সরিয়ে ফেলে।
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ট্রেনের সাথে ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকচালক ও হেলপারের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি জিআরপি পুলিশের। এই ঘটনায় আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি গেটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরে গেটম্যান পলাতক রয়েছেন। যশোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আইনাল হাসান বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে চিলাহাটি থেকে খুলনামুখী রকেট মেল ট্রেনটিতে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর খুলনাগামী সকল রেললাইনে ট্রেন কিছুক্ষণ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
যশোর রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ দুটি যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
যশোর রেলের স্টেশন মাস্টার আইনাল হাসান বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিলাহাটি থেকে খুলনামুখী রকেট মেল ট্রেনটিতে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর খুলনাগামী সকল রেললাইনে ট্রেন কিছুক্ষণ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
Subscribe to Updates
শিরোনাম:
- নড়াইলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, গুলিবিদ্ধসহ আহত ২
- তাঁরার মেলা শিল্পী গোষ্ঠীর নাত-ই রাসুল সন্ধ্যা
- আসাদ স্মৃতির সেলাই মেশিন ও নগদ টাকা বিতরণ
- বালির বস্তাবন্দি প্রতিবন্ধীর মরদেহ উদ্ধার
- যশোর কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান
- প্রেমিকার ডাকেও …….!
- যশোরে পুনশ্চ’র বার্ষিক সনদপত্র বিতরণ
- অভয়নগরে পূর্বশত্রুতার জেরে ছুরিকাঘাতে শ্রমিক নিহত, আহত ২