বিবি প্রতিবেদক
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরে ছয়টি আসনেই নৌকার বিপক্ষে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রতিটি আসনেই নৌকা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সমার্থকদের মধ্যে বিভিন্নভাবে শাসানো, হুমকি-ধমকি দেয়া, এমনকি প্রাণনাশের মতো বর্বরোচিত ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পরিবেশ কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে যশোরের ছয়টি আসনেই। জেলার ছয়টি আসনের ৮২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৭৫টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ; যা মোট কেন্দ্রের প্রায় ৩৫ শতাংশ। সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যশোরে ছয়টি আসনে ১৬ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়ন করা হবে। আগামি ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন উপ পরিদর্শক (এস আই) নেতৃত্বে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়েজিত থাকবে। এছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নির্বাচনী এলাকা টহল দিবেন সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে যশোর পুলিশ লাইনসে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার।
গতকাল সকাল ৯টায় যশোর পুলিশ লাইনস মাঠে প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী সহকারী পুলিশ সুপার ও পুলিশের ইন্সপেক্টর পদমর্যদার কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্য ও আনসার বাহিনীর সদ্যেদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে যশোর পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের উদ্ধতন কমকর্তারা। এসময় তাদেরকে ভোটারদের শান্তিপূর্ণভাবে ভোটদানের ব্যবস্থা করা এবং শতভাগ নির্বাচনী সরঞ্জাম ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে কোন প্রার্থী ও তার সমর্থকদের সাথে দুরত্ব বজায় রাখা ও ভোটের দিন দুপুরে শুকনা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এজন্য প্রত্যেককে মাথাপিছু এক হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
নিউজের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হলেও আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি না। নির্বাচনে নিরাপত্তা দিতে ২৫০০ পুলিশ সদস্য, ১০ হাজার আনসার সদস্য, ৪৫০ বিজিবি সদস্য, সেনা সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেটসহ গোয়েন্দা বাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে ।এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দাবাহিনী কাজ করবে। নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকবে যশোরের সকল কেন্দ্র।
যশোরের পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কেন্দ্র দখল, ভোটকক্ষ দখল, ভোট কাটা, ভোটের পরিবেশ নষ্ট করা এ ধরণের চিন্তা যদি কেউ করেন: তাদের কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি নাশকতামূলক কর্মকান্ডের ছক করেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ও জেলা আনসার কমান্ডেন্ট সঞ্জয় সাহা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইনসহ পুলিশের উধ্ধতন কর্মকর্তারা।
জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, বর্তমানে যেসব কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বলা হচ্ছে, আগে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলা হতো। বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে এই তালিকা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে যে কেন্দ্রে ভোটার বেশি, কোনো প্রার্থীর বাড়ির কাছে ভোটকেন্দ্র কিনা, প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা, যাতায়াত ব্যবস্থা প্রভৃতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের নিয়মিত অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হবে। নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। পরিবেশ ভালো রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে ভোটযুদ্ধে ৩২জন প্রার্থী লড়বেন। নৌকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৮ প্রার্থী মাঠে থাকছেন। ভোটে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মূল লড়াইয়ের আভাস মিলছে। জেলায় ৮২৫টি ভোটকেন্দ্রে ৫ হাজার ২১৭টি ভোট কেন্দ্রে ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটর হলেন ১১ লাখ ৭৬ হাজার ১০৫ জন নারী ১১ লাখ ৬২ হাজার ৯৩৫ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হলেন ১৫ জন।