বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘এসো স্মৃতির প্রাঙ্গণে, মিলি প্রীতির বন্ধনে’ স্লোগানে মঙ্গলবার যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চিত্রা মডেল কলেজে পুনর্মিলনী উৎসব অনুষ্ঠিত। কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা এক ভিন্ন মাত্রা এনে দেয় কলেজ প্রাঙ্গণে। ২০০৩ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো পুনর্মিলনীতে হাজির হয়েছিলেন প্রাক্তন হাজার খানেক শিক্ষার্থী। সবার চোখেমুখে ছিল অতীতকে ছুঁেয়ে দেখার উচ্ছ্বাস।
চাকরি, ব্যবসা ও প্রবাসী জীবনসহ নানা কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত সবাই। ব্যস্ততার কারণে সহপাঠীদের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই। তবে দীর্ঘদিন পর সবার দেখা হলো, চিরচেনা কলেজ প্রাঙ্গণেই। যেমনিভাবে শত শত লোকের ভিড়ে রুমা খাতুন চিনতে ভুল করেননি তার সহপাঠী মুন্নিকে। দীর্ঘ ২০ বছর পর দুজনের দেখা। রুমা মুন্নিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘কিরাম আছিস তুই, এতদিন কনে ছিলি।’ এরপর নিরন্তর আড্ডা-খুনসুটি ও গান- বাজনা যেন এক মুহূর্তেই ফিরিয়ে আনল বিগত সময়কে। কর্মব্যস্ত জীবনের একঘেঁয়ে প্রাত্যহিকতার বাইরে এসে সবাই সিক্ত হলেন বাঁধভাঙা আনন্দে।
সকাল ১০টায় পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপি কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। এরপর বৃক্ষরোপণ ও স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন শেষে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর -ই-আলম সিদ্দিকী, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাউবি’র আঞ্চলিক পরিচালক সেখ সোহেল আহমেদ ও বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন সরকার।
মধ্যাহ্নভোজের পর দ্বিতীয় অধিবেশনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এ সময় তিনি কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, “চিত্রা মডেল কলেজ যশোরের শিক্ষার অগ্রগতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। এই ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলে এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির ধারাকে আরও বেগবান করে।” শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্ববন করে শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশ করতে হবে।
নির্দিষ্ট পাঠের বাইরে ও তাদের কে সাধারন জ্ঞানে দীক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. আছাদুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব ও বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান। চিত্রা মডেল কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শামীম আকতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ কহিনুর আলম। পুনর্মিলনী উৎসব সঞ্চালনা করেন, কলেজের প্রভাষক রস্তম আলী ও শায়লা শারমীন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, যশোর জেলা যুবদলের আহবায়ক আনসারুল হক রানা প্রমুখ।
সব শেষে বিকেলে চলে যশোর ও খুলনার শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্ব। সন্ধ্যা ঘনিয়ে তখন বাড়ি ফেরার পালা। বন্ধুরা মিলে তখন গেয়ে চলেছে, ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।’