বাংলার ভোর প্রতিবেদক
নিম্নচাপের কারণে যশোরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে বৃষ্টি কমলেও দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের। এতে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। দিনের বেলায় কিছুটা সহনীয় হলেও রাতের বেলায় ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা বাড়ে কয়েকগুণ। বৃষ্টির সঙ্গে শীত বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও বোরো চাষিরা।
যশোর মতিউর রহমান বিমান ঘাটির নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ছিল ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ১ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বার্তায় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার সকালে কথা হয় যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকার চা দোকানী নজরুল খাঁ সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোর থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম দিক থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে তার শরীর হিম হয়ে উঠেছে। একদিকে শীত আর রোদ না উঠাতে বাইরে জনসাধারণ বের হচ্ছে কম।
আক্কাস আলী বলেন, একদিন দোকান বন্ধ থাকলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে। পরিবারের তাগিদে এমন শীতে আমাকে দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে। যখন কুলাতে পারছি না তখন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছি। রিকসা চালক আলেক মিয়া বলেন, হাড় কাঁপানো এই শীতে সবাই ঘরে রয়েছে, আমাকে পেটের দায়ে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়েছে। ভ্যান চালিয়ে সারা দিনে যেটুকু পাই, তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। শীত নিবারণের গরম কাপড় কী দিয়ে কিনবো। শুনতে পাচ্ছি, অনেকেই কম্বল আবার কেউ কেউ জ্যাকেট পেয়েছে। কই, আমি সারা দিন রাস্তায় পড়ে আছি, কেউ একটি কম্বল বা জ্যাকেটও তো দেয়নি আমাকে।
রিকশাচালক তোফায়েল বলেন, সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, তবুও পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। বৃষ্টির কারণে ঠাণ্ডা বেশি, তাই রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যাও কম। সকাল থেকে যা ইনকাম করেছি, তা দিয়ে বাজার খরচ হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বেশিরভাগ কৃষকই তাদের ধান ঘরে তুলে নিয়েছে। এখনও মাঠে অল্প কিছু কৃষকের ধান রয়েছে। সকাল থেকে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বড় ধরনের ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই। সামনে বোরো ধানের মৌসুম। কৃষকরা বীজতলা প্রস্তুত করছেন। বৃষ্টি হলে বোরোর বীজতলা ভালো হবে। শীতকালীন সবজি চাষেও এর কোনও প্রভাব পড়বে না।
এদিকে শীত নিবারণের জন্য যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার কম্বল বিতরণ করার প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আট উপজেলায় ২৪ লাখ টাকা পাওয়া গেছে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে। এই টাকা দিয়ে কম্বল কিনে বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম।