বাংলার ভোর প্রতিবেদক
চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও নিরীহ কারাবন্দি বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের মুক্তির দাবিতে যশোরে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে প্রেস ক্লাবের সামনে চাকুরিচ্যুত ‘বিডিআর সদস্য যশোর অঞ্চল’ -এর ব্যানারে এই মানববন্ধন করা হয়। যশোর খুলনা সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রায় তিন শতাধিক চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মানববন্ধনে অংশ নেয়। তাঁরা বিভিন্ন দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘বিডিআর আমার স্বামীর চাকরি ফেরত চাই, ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যার বিচার চাই, আমরা নির্দোষ বিডিআর চাকুরি ফেরত চাই, আমার বাবা বিদ্রোহী নয়, দেশ প্রেমিক বিডিআর সৈনিক। মানববন্ধন শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। শেষে যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা এ দেশের সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার নীলনকশা করেন। সেনা কর্মকর্তাদের খুন ও গুমের পর এ দেশের হাজার হাজার নিরীহ বিডিআর সদস্যকে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। যাঁদের মধ্যে এখনো অনেক বিডিআর সদস্যরা বিনা বিচারে জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকেই নিখোঁজ আছেন। যেসব বিডিআর সদস্যরা কারাবরণ করে বাড়িতে ফিরেছেন, চাকুরি হারিয়ে অসহায় মানবতার জীবনযাপন করছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১৮ হাজার ৫২০ জন বিডিআর সদস্যকে বিনা বিচারে কারাবরণ করতে হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের খুঁজে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আর যাঁরা নিরীহ ও নিরপরাধ বিডিআর সদস্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। আর যাঁরা এখনো কারাবন্দী আছেন, তাঁদেরও জেল থেকে মুক্তি দিয়ে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান বক্তরা।
হাতে দাবির প্ল্যাকার্ডে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ৭৫ বছর বয়সী বিডিআর সুবেদার সিরাজুল কবির। তিনি জানান, ‘আমার আর চাকুরি ৩ মাস ২২ দিন ছিলো। তার আগেই বিডিআর হত্যাকান্ডের অভিযোগে দিয়ে আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। আড়াই বছর কারাবরণ করে তিনি নিজ গ্রাম সাতক্ষীরাতে চলে যান। তিনি জানান, ‘চাকুরি শেষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু সেনা হত্যার তর্কমা নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আসলেই আমি হত্যার সঙ্গে ছিলাম না। তারপরেও চাকুরিচ্যুত হয়ে জেল খাটলাম। বাড়িতে থাকাকালীন পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতার জীবন যাপন করছি।’
খুলনা পাইকগাছার থেকে আসা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চাকুরির ৬ মাস পূর্তির আগেই চাকুরিচ্যুত হয়েছি। দেড় বছর কারাবরণ করে যখন পরিবারের কাছে ফিরেছিলাম। তখন লজ্জায় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। গেছিলাম দেশ রক্ষা, দেশ সেবার জন্য। কিন্তু আমাদের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হলো বিডিআর বিদ্রোহী হিসাবে। আমার সন্তানদের ভালো স্কুলে ভর্তি করতে পারেনি। বাবা হিসাবে সন্তানদের কাছে লজ্জাবোধ করি।’
মানববন্ধনে উপস্থিত এক নারী নিজেকে একজন বিডিআর সদস্যের স্ত্রী পরিচয় দেন। তার বাড়ি সাতক্ষীরা তালা থানাতে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ঢাকা পিলখানায় কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার পরও তাঁর কোনো দোষ পাওয়া যায়নি। তিনি আদালতের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হন। এরপরও তাঁকে এখনো জেল খাটতে হচ্ছে। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই এবং চাকরিতে পুনর্বহাল চাই। তিনি বলেন আমার তিন সন্তান। স্বামীর অনুপস্থিতিতে মানবতার জীবনযাপন করছি।’
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ ৬টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিসমূহ হলো- নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল চাই। নিরপরাধ বিডিআর সদস্য যারা এখন পর্যন্ত জেলে বন্দি আছে তাদের অবলিম্বে মুক্তি চাই। যে সমস্ত চৌকস সেনা অফিসার পিলখানার হত্যাকান্ডে শহিদ হয়েছেন ওই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার করতে হবে। ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ সেনা হত্যা দিবস’ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি। শহীদ সেনা অফিসার পরিবার কর্তৃক যে ৭টি দাবি উপস্থাপন করেছেন ওই ৭টি দাবির পূর্ণ সমর্থন জানাই। বিডিআর সদস্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
শিরোনাম:
- গদখালীতে মহাসড়কের পাশে ফুল বেচাকেনায় নিষেধাজ্ঞা
- বটতলায় ঐতিহ্যের লোকজ মেলায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন
- আমাদের রবীন্দ্র চর্চা বাড়াতে হবে : অর্দ্ধেন্দু প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
- অচিরেই জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে : নার্গিস বেগম
- কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমাতে ইউএনও’দের নির্দেশ
- যশোরে মোটর গ্যারেজ মালিককে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
- ডুমুরিয়ায় ৪ দিনব্যাপি বিশেষ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন
- ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কোর্স স্নাতক সমমানের দাবি