বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ব্যতিক্রম আয়োজনের মধ্যদিয়ে চাকরি জীবনের শেষ দিনে ফুলে সাজানো গাড়িতে তিন গ্রাম ঘুরিয়ে শিক্ষক আলতাফ হোসেনকে বিদায় দিলেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। যশোর সদর উপজেলার বীরনারায়ণপুর তেরআউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে কর্মময় জীবন শেষ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এসএম শামিম হোসেন। উপস্থিত ছিলেন, নয়ন হোসেন, আরিফুর জামান ছনি, শেখ সাদি, জুয়েল হোসেন, মুরসালিনসহ স্থানীয় লেবুতলা, বীরনারায়ণপুরসহ কয়েক গ্রামের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিদায়ী শিক্ষককে বিভিন্ন উপহার প্রদান করেন স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা।
বীরনারায়ণপুর তেরআউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, আমি আলতাফ হোসেন স্যারের ছাত্র ছিলাম। স্যারকে ছুটি নিতে দেখিনি। অসুস্থ থাকলেও স্যার স্কুলে এসেছেন। স্যার’র দেয়া শিক্ষা নিয়ে আজ আমরা নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্যার আমাদের আদর্শ। একজন আদর্শ শিক্ষক আজ চাকরি থেকে বিদায় নিলেন। স্যার ভালো থাকুন সব সময়।
ফারিয়া মিম বলেন, ক্লাসে পড়াশুনা সুন্দর করে বুঝাতেন। স্কুল পরিস্কার করে রাখতেন তিনি। শুধু পড়াশুনা না; বিভিন্ন কারিকুলামে উদ্বুদ্ধ করতেন।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আলভি হাসান বলেন, স্যার আমাদের সন্তানের মতো দেখেন। কোন কারণে স্কুলে আসতে না পারলে বাড়িতে যেয়ে খোঁজ খবর নিতেন। সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, স্কুলের জন্য বিভিন্ন সময় কেনাকাটা করেছি। এক টাকা অতিরিক্ত খরচ করতেন না। তিনি সৎ মানুষ ছিলেন।’
এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিদায়ী শিক্ষক আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে স্থানীয় কয়কজন মিলে উদ্যোগ নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। আমি চেষ্টা করেছি কোন ধরনের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ছুটি না নিতে। শিক্ষার্থীদের সবসময় পড়াশুনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছি। পরিশেষে কর্মময় জীবনে কোন ধরনের ভুলত্রুটি করে থাকলে সবার কাছ ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বাকি জীবন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারি সবার কাছে দোয়া কামনা করছি। আমার চাকরি জীবনের শেষ দিনে সুন্দর আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে বিদায় হবে যা ছিল কল্পনাতিত। এটা আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি। যা বাকি জীবনটুকু মনে রাখার মত। সবার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা।
শিক্ষক আলতাফ হোসেন উপজেলার বীরনারায়নপুর গ্রামের আজিম উদ্দিন এর ছেলে। তিনি ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে আছে। তিনি ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। কর্মময় জীবনে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা দিয়েছেন। যারা বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা ও রাজনীতিতে দেশ ও জাতির জন্য অবদান রেখে চলছেন।