বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের বহুল সমালোচিত সাবেক টাউন (টিএসআই) ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝরুণা ইয়াসমিনের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের দুইজনের জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৫ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সিনিয়র স্পেশাল জজ (জেলা দায়রা ও জজ আদালত) বিচারক শেখ নাজমুল আলম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদুকের স্পেশাল পিপি মো. সিরাজুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম বর্তমানে ফরিদপুর জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।
দুদুকের স্পেশাল পিপি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যশোরের বহুল আলোচিত টিএসআইরফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝরুণা ইয়াসমিন স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর। শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত ক্রোকের আদেশ দেন। বুধবার ক্রোকের আদেশ পৌচ্ছে দেওয়া হয়েছে। এখন আদালতের নির্দেশনা মেনে দুদুক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
ক্রোকের আদেশ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে রফিকের রফিকুল ইসলামের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শুকতাইল মৌজাতে ১৮৩ দশমিক ০৪ শতক। একই উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা মৌজাতে ৬৭ শতক। সর্বমোট ২৪৯ দশমিক ০৪ শতক। যার ম্ল্যূ ১২ লাখ ৫০ হাজার ৯২৫ টাকা। রফিকের স্ত্রী ইয়াসমিনের গোপালগঞ্জ পৌরসভার খাটরা মৌজাতে ৭ শতকের মধ্যে ২ দশমিক ৩৩ শতক । বাকী অবশিষ্ট তার শালিকার নামে ক্রয় করা। জমিরি মূল্য ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৬ টাকা। স্থাপনার মূল্য ১ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৬৬ টাকা। যশোর পৌরসভার বারান্দি মৌজায় ৬ দশমিক ৬৭ শতক জমি। যার মূল্য ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। স্থাপনার মূল্য ৯১ হাজার ৬১ হাজার ৬৯৭ টাকা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সেনপাড়া পার্বত্য মৌজাতে ৮ দশমিক ২৪ কাঠার০০৯০ দশমিক ৬ অযুতাংশ। জমির মূল্য ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৭১ টাকা। ফ্লাট নির্মাণ ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা জেলার বিলামালিয়া মৌজাতে ৬ দশমিক ৫০ শতক। যার মূল্য ৮৮ হাজার টাকা। খুলনা সিটি কর্পোরেশন মুজগুন্নি আবাসিক মৌজাতে ০ দশমিক ০৬৬১ একর। যার মূল্য ১০ হাজার টাকা। খুলনা ফুলতলরে ৯ নাম্বার মশিয়ালিতে ৭ শতক। যার মূল্য ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন হড়গ্রাম মৌজাতে ০ দশমিক ০০৩০৮ একর ১০ লাখ টাকা। যশোর পাগলাহ মৌজাতে ১৯১ শতক জমির মূল্য ১১ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা। খুলনার ফুলতলা মশিয়ালি মৌজাতে এক একর ৫০ শতক স্ত্রীর নামে। বাকী অংশ শালিকার নামে ক্রয় করা। যার মূল্য ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা, অবশিষ্ট মূল্য ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। যশোর কোতয়ালীর পাগলাদাহ মৌজাতে ৮৫ শতক। যার জমির মূল্য ৪০ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকা। স্থাপনার মূল্য ৮৯ লাখ ১৫ হাজার ২২৩ টাকা। যশোর পৌরসভার বারাদ্দি মৌজাতে ১ দশমিক ০৩৮ শতক জমির মূল্য ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা। স্থাপনার মূল্য ৯২ লাখ ০৩ হাজার ৬৪৭ টাকা। একই স্থানে ৬ দশমিক ৫০ শতকের বাড়ির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। মোট ৪২৯ দশমিক ৫৪৪ শতক। যার মোট মূল্য ৫ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭০ টাকা।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের আদালতে করা আবেদনে বলা হয়, ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দ্বারা তাদের নামে সম্পদ অর্জন করা আনিত। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে দুনীর্তি দমন কমিশন থেকে তার ও তার স্ত্রী ঝরণা ইয়াসমিনের এর প্রতি সম্পদ বিবরণী নথি জারি করা হয়। তাদের দাখিলকৃত সম্পদ বিররণী যাচাইকালে দেখা যায় যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ঠ রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝরণার নামে গোপালগঞ্জ জেলা শহরে সাত তলা বিল্ডিং, যশোর শহরে একটি ছয় তলা ভবন, দুই তলা মার্কেট ও একটি দোকান বিল্ডিং। ঢাকাতে ফ্লাট, রাজশাহী শহরে বাড়ি এবং খুলনাতে জমি ও ফ্লাটসহ সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছে বলে প্রমাণসহ জানা গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত অপরাধলব্ধ সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর/বিক্রি করার চেষ্টা করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে দ্রুত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধনী ২০১৯)-এর বিধি ১৮ মোতাবেক বর্ণিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক/অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।