বাংলার ভোর প্রতিবেদক
জুন মাসের মাঝামাঝি পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে যশোরে ৮ উপজেলায় কোরবানির জন্য খামার ও বাড়িতে মোটাতাজা করা হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৮৫১টি পশু। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৩৯ হাজার ৬৭৮টি, ছাগল ৮৬ হাজার ৩৬৫টি ও ভেড়া রয়েছে ৮০৮টি। যার অর্থমূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এবারের কোরবানিতে জেলার চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করবে যশোরের ৩০ হাজারের বেশি পশু। যশোর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৯৬ হাজার ৭১৮টি। এই চাহিদা মিটিয়ে ৩০ হাজার ১৩৩টি পশু সারা দেশে যাবে। এসব পশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও কৃষকরা যাতে কোনও ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবার ব্যবহার না করেন, সেজন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে।
কৃষক ও খামারিরা জানিয়েছেন, কেউ বাড়িতে আবার কেউ খামারে এসব পশু লালনপালন করছেন। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে পশু মোটাতাজা করছেন। খড়ের পাশাপাশি গমের ভুসি ও বুটের খোসা খাওয়ান অনেকে। ছোট-বড় পশুর খামারে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আসছে কোরবানির ঈদে এসব পশু বিক্রি করে বাড়তি আয়ের আশা করছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, এবার জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর (ষাঁড় ও গাভি) গড় ওজন প্রায় সাড়ে ৪ মণ। এছাড়া ছাগল ও ভেড়ার গড় ওজন প্রায় ১২ কেজি।
যশোরে এবছর প্রায় ৬০০ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক। যশোরের কোরবানির পশু থেকে প্রায় ৪ লাখ স্কয়ার ফিট কাঁচা চামড়া পাওয়া যাবে। যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, যশোরের আট উপজেলায় নিরাপদ গবাদিপশুর মাংস উৎপাদনে হৃষ্ট-পুষ্টকরণ গবাদি পশুর খামার রয়েছে ১৪ হাজার ১৩৫টি। এর মধ্যে বাঘারপাড়া উপজেলায় ২ হাজার ৭৯৯, চৌগাছা উপজেলায় ২ হাজার ৬০৫, মণিরামপুর উপজেলায় ২ হাজার ৫৩০, কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ৪০৩, সদরে ১ হাজার ৩৪০, ঝিকরগাছায় ১ হাজার ৩২০, শার্শায় ১ হাজার ২৯৫ এবং অভয়নগর উপজেলায় ৮৪৩টি খামার রয়েছে। এ সব খামারের খামারিরা এখন কোনো অসদুপায় অবলম্বন করে গরু মোটাতাজা করেন না। প্রতিনিয়ত খামারিদের সঙ্গে বৈঠক করে এবং তাদের সচেতন করাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হয়।
গরুর খামারি বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের ভাংগুড়া গ্রামের টিপু সুলতান জানান, তার কোরবানি উপযোগী ১০০টি ষাঁড় আছে; যা গড়ে প্রায় আট মণ ওজনের। এছাড়া তার কাছে ১২ মণ ওজনের ২৪টি ষাঁড় রয়েছে। সবকয়টি বিক্রি উপযোগী। তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস, বিচেলি, গমের ভুসি ও বুটের খোসা খাইয়ে ষাঁড়গুলো মোটাতাজা করছেন। গতবছর প্রতি কেজি ৫৫০টাকা করে ঢাকার ব্যাপারীরা কিনেছিল। এবার গত বছরের চেয়ে বেশি দাম পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের রহেলাপুর গ্রামের খামারি শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি এবছর কোরবানীতে বিক্রির জন্য প্রায় ৮ মণ ওজনের ২টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। আশা করছেন ভালো দাম পাবেন। বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের রফিকুল বিশ^াস জানান, তিনি নিজ বাড়িতে কোরবানির জন্য ৪টি গরু লালন-পালন করেছেন। প্রতিটি গরু এক লাখ টাকার উপরে দাম পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।