বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
ওপেন হার্ট সার্জারি করে চিকিৎসাধীন যশোরের শার্শার শিববাস গ্রামের আব্দুর রব (৬১) ও তার স্ত্রীর নামে পরপর তিনটি মামলা করেছেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামের আব্দুল কাদের। এর মধ্যে দুটি খুন-জখমের হুমকি এবং একটি বিদেশ নিয়ে যাওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের মামলা।
মামলার খবর শুনে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ বৃদ্ধ আব্দুর রব। কারণ তিনি একজন সামাজিক ব্যক্তিত্ব। এলাকায় শিক্ষার বাতিঘর খ্যাত ডিহি ইউনিয়ন পাবলিক লাইব্রেরির জীবন সদস্য। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যশোরের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদিকতা করেছেন তিনি। অথচ বৃদ্ধ বয়সে হুমকি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় হতবাক হয়েছেন তিনি ও তার স্ত্রী।
সূত্র মতে, কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামের আব্দুল কাদের শার্শার শিববাস গ্রামের আব্দুর রব, স্ত্রী সুরাইয়া বেগম ও পুত্র খালিদ হাসান নিপুর নামে চলতি বছরের ১০ মার্চ ঝিনাইদহ আদালতে একটি মামলা করেন। এতে উল্লেখ করা হয় আব্দুর রবের ছেলে খালিদ হাসান নিপু মালয়েশিয়ায় থাকেন। বৈধ ভিসায় ভালো বেতনে সেখানে লোক নিয়ে যাবেন। আব্দুল কাদেরের দাবি, বিদেশ যেতে ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে তিনদফায় ৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু বিদেশ নিতে ব্যর্থ হলে টাকা ফেরত চায়। বিদেশ থাকা খালিদ হাসান নিপুসহ তার পিতামাতার কাছে টাকা চেয়ে না পেয়ে তিনি আদালতে মামলা করেন। একই সাথে আব্দুল কাদের এই মামলা করার আগের দিন অর্থাৎ চলতি বছরের ৯ মার্চ অসুস্থ আব্দুর রব ও তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের নামে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে ঝিনাইদহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এতে তিনি দাবি করেছেন কোটচাঁদপুর বাগডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। আর গত ২ এপ্রিল বলুহর গ্রামে তার বসতবাড়ি গিয়ে মামলা তুলে নিতে খুন-জখমের হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে আব্দুর রব দাবি করেছেন, তিনটি মামলাই সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি বাইপাস সার্জারি করে এখনো গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কারো সাহায্যে ছাড়া চলাচল করতে পারছেন না। সেখানে কোটচাঁদপুরে গিয়ে খুন-জখমের হুমকি দেব কিভাবে ? তিনি আরো বলেন, তার পুত্র বিদেশ আছেন ঠিকই। সেখানে আমার অমতে ৭ বছর হলো বিবাহ করে বসবাস করায় পরিবারের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। প্রায় এক বছর হলো আমার হার্টের ৫টি ব্লক ধরা পড়ায় যশোর, খুলনা ও ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছি। সর্বশেষ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এক মাস ১৮ দিন ভর্তি ছিলাম। গত বছর ২ সেপ্টেম্বর ওপেন হার্ট সার্জারি করেন চিকিৎসক। এমন দুর্দিনেও ছেলে খোঁজ নেয়নি। টাকা দেয়নি। যশোরের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় এমপি, বন্ধু-আত্মীয় স্বজন, ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে আর্থিক সহায়তা করায় চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পেরেছেন। আর সর্বশেষ ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ থেকে অর্থ পেয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। সেখানে হত্যা-জখমের হুমকিসহ আমার নামে তিনটি মামলা দেয়া হয়েছে।
শার্শার ডিহি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওপেন হার্ট সার্জারি করা আব্দুর রব এখনো বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঠিকমতো চলতে পারেন না। এছাড়া আব্দুর রব একজন সামাজিক মানুষ। এলাকায় স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পেছনে তার ভূমিকা রয়েছে। সেখানে তার ও তার স্ত্রী নামে তিনটি মামলা হওয়ায় আমি নিজেই ক্ষুব্ধ।