স ম নজরুল ইসলাম, কপিলমুনি

ইতিহাস ঐতিহ্য আর জনপদের সাক্ষী মানুষের জীবন-জীবিকার বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকার জন্য কপোতাক্ষ পাড়ে ব্যবসায়িক মালামাল উঠা নামার জন্য ঘাটের দাবি এখন সর্বস্তরের এলাকাবাসীর।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু কালের সাক্ষী কপোতাক্ষ নদ। নদীটিকে ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্রাচীন আমল থেকে নদীটিকে ঘিরে লাখো মানুষ জীবন-জীবিকার নির্ভর করে আসছে। কয়েক বছরে কপোতাক্ষের অকাল মৃত্যুতে উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবীকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

কপোতাক্ষকে ঘিরে এর দু’তীরে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক নগরী ও জনবসতি। তেমনি একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কপিলমুনি বাজার। এই বাজারকে ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এক সময় কপিলমুনি থেকে পাইকারী ব্যাবসায়ীরা মালামাল কিনে ট্রলার ও নৌকাযোগে পাইকগাছা-কয়রাসহ সন্দরবন সংলগ্ন হাট গুলিতে বিক্রয় করতো।

বিশেষ করে গড়ইখালী, সোলাদানা, শান্তা, নলিয়ান, চাদখালী, গজালিয়া, কালাবাগী, আমুরকাটা, দেউড়ীর হাট, আলমতলা, মিনেজ বাজার, সুন্দরবনের মাছ ধরা জেলেরাসহ বেশ কিছু হাটের পাইকাররা গুরুত্বপূর্ন এ বাজার থেকে মালামাল ক্রয় করে ভরা যৌবনা কপোতাক্ষ দিয়ে ওই সমস্ত হাটে নিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করত।

কালের পরিক্রমায় সেই কপোতাক্ষের মৃত্যু হলে কপিলমুনি বাজারের কপোতাক্ষের সে ঘাট বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে অদ্যাবধি ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে কপিলমুনি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ অংশে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুজ্জামান মোড়লের নির্মিত ঘাট দিয়ে মালামাল ওঠানামা করে নৌকা ও ট্রলারযোগে উল্লেখিত এ সমস্ত বাজারে বিক্রি করে আসছে।

যাতে ব্যবসায়ীদের বাড়তি পরিবহন খরচ করতে হচ্ছে। তাছাড়া কপিলমুনি বাজারের সে সমস্ত শ্রমিকরা এ সমস্ত মালামাল নৌকা বা ট্রলারে উঠানামা করে জীবিকা নির্বাহ করত কপিলমুনির কপোতাক্ষে ঘাট না থাকায় তারা অনেকে বাধ্য হয়ে এ কাজ ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে কপোতাক্ষ খননে ২০১১ সালের নভেম্বরে একনেকের সভায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কপোতাক্ষ খননে ব্যাপক অনিয়মের পরও ফিরে আসে জোয়ার-ভাটা, বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্নে নদীর উপর নির্ভরশীল জনপদের মানুষের মধ্যে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হয়।

কিন্তু কপোতাক্ষ খনন হলেও কপিলমুনি বাজারের কপোতাক্ষ নদীতে ঘাট না থাকায় ব্যবসায়ীরা নৌকা-বা ট্রলার নিয়ে মালামাল কেনার জন্য কপিলমুনিতে আসতে পারছে না। কপিলমুনি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষের ঘাটে নিয়ে তাদের মালামাল বহন করতে হচ্ছে।

ফলে তাদের একই মালামাল দু’ বার উঠা-নামা করার কারণে এবং ডাঙ্গা পথে বাড়তী পরিবহন খরচের জন্য তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাজারের সকল ব্যবসায়ীদের দাবি খুব তাড়াতাড়ি কপিলমুনির কপোতাক্ষ অংশে নদীতে মালামাল উঠা-নামার জন্য একটি ঘাট নির্মাণ হোক। যাতে ফিরে পাবে কপিলমুনির শ্রমিকরা তাদের কর্ম ক্ষেত্র, ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

কপিলমুনি হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কপিলমুনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার বলেন, ব্যাবসায়ীদের সুবিধার্থে বর্তমান সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান মোড়লের সহযোগিতায় কপিলমুনি বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদীতে ঘাট নির্মাণ করা হবে ।

Share.
Exit mobile version