বাংলার ভোর প্রতিবেদক
নৃত্য, গান, কবিতা আবৃত্তি আর কথামালার মধ্য দিয়ে যশোরে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সাম্য ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন যশোর। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন। শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষার্থীরা। একের পর এক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য রবীন্দ্র-নজরুলের দলীয় সংগীত, কখনো একক। আবার এই দুই কবির কালজয়ী সব গানে নৃত্য পরিবেশিত হয়। একের পর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় মুগ্ধ করে উপস্থিত দর্শকদের।
সন্ধ্যার পরে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব আলোচনা সভা। বক্তারা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এবং কাজী নজরুলের জীবন ও দর্শনের উপর আলোচনা করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের সভাপতিত্বে সম্মানিত আলোচক ছিলেন ঝিনাইদহ সরকারি কেশবচন্দ্র (কেসি) কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. বিএম রেজাউল করিম, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সী আবু সাইফ। বক্তারা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং কাজী নজরুলের দর্শন একসঙ্গে দেখলে তার কেন্দ্রে বাঙালি জাতিসত্তা, আত্মপরিচয় এবং আত্মমর্যাদা খুঁজে পাই। বাঙালির আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ছিল রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুলের মধ্যকার নিবিড় যোগসূত্র। কাজী নজরুল ইসলাম প্রথাগত মানুষ ছিলেন না। প্রচলিত সমাজভাবনা ও ধর্মচিন্তা দিয়ে তাঁকে বিবেচনা করা যাবে না। এ জন্য সমকালীন সময়ে তাঁকে অনেক অশ্বস্তি, সাহিত্যিক আক্রমণ ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছিল। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বিশ্বজনীন মানুষ।
তিনি তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথ চাইতেন বাঙালি মানুষ হয়ে উঠুক। কিন্তু দুর্ভাগ্য, রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের মতো প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি আমরা। নতুন প্রজন্মকে শুধু জিপিএ-৫ আর গোল্ডেন প্লাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। মানবিক শিক্ষায় মানুষ করার কথা ভাবছি না। একটি জাতিকে কিভাবে নির্মাণ করতে হয় রবীন্দ্রনাথ আমাদের সে শিক্ষাও দিয়ে গেছেন।’ অনুষ্ঠান শেষে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, নৃত্য, একক অভিনয় ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এদিকে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী শিল্পগোষ্ঠী যশোর। এদিন সন্ধ্যায় শহরের মাওলানা মোহাম্মদ আলী সড়কস্থ (এম এম আলী ) নিজ কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি পরিবেশন করেন সংগঠনের শিল্পীরা।