বাংলার ভোর প্রতিবেদক
গুজব সৃষ্টিকারী নিউজপোর্টাল শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সাথে জনদুর্ভোগ, স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম, উন্নয়ন কাজের ধীরগতি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভূপালী সরকার অনলাইন নিউজ পোর্টালের অপব্যবহারের বিষয়টি সভায় উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বেনামী ও ভুয়া নিউজপোর্টাল ইচ্ছামতো সংবাদ পরিবেশন করছে এবং সম্প্রতি ঝিকরগাছার একটি রাস্তার কাজ নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছে। ভূপালী সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে একই অভিযোগ করেন যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার হরেন্দ্র নাথ বর্মন। তিনি জানান, বেনাপোল এলাকায় এ ধরনের ভুয়া সাইটের দৌরাত্ম্য বেশি। কয়েকদিন আগে লাইন মেরামতের জন্য দুই এক ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তারা এমন ভাবে প্রচার করেছে যেন দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়নি।
জেলার সিনিয়র তথ্য অফিসার রেজাউল করিম জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে ভুয়া সাইটের সংখ্যা বেড়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে গুজব সৃষ্টিকারী পোর্টাল শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান জানান, জেলা পরিষদের অর্থায়নে পালবাড়ি এলাকায় একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে নির্মাণ কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে যশোর পৌরসভায় পশুর হাট বসানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানায় পৌর কর্তৃপক্ষ।
সভায় জেলার স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ তুলে ধরেন সিভিল সার্জন মাসুদ রানা। তিনি উল্লেখ করেন, উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের জন্য পর্যাপ্ত কিটের অভাব রয়েছে, যা এই সময়ে উদ্বেগের কারণ। এছাড়াও, পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের টিসিবির পণ্য বিতরণ ও টোল আদায়ের মতো কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের মূল দায়িত্ব পালন ব্যাহত হচ্ছে। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশেপাশে মাদকের আঁখড়া গড়ে ওঠার বিষয়ে তিনি পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাক জাতীয় পণ্য বিক্রির দোকান বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অভ্যন্তরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম্য কমাতে হাসপাতাল প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। চুড়ামনকাটিতে গড়ে ওঠা ননী ফলের নার্সারির মালিকের প্রভাব ও অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, ননী ফল একটি যৌন উত্তেজক ভেষজ এবং এর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন সাফায়েত জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রায় ৮০টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল এলাকায় সক্রিয় রয়েছে এবং অফিস সময়ের বাইরে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, কেশবপুর হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক নেই। অ্যাম্বুলেন্সকে মানুষের জীবন রক্ষাকারী উল্লেখ করে তিনি দ্রুত মাস্টার রোলের মাধ্যমে হলেও একজন চালক নিয়োগের নির্দেশ দেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গভীর নলকূপ স্থাপন কাজের ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক এবং ঠিকাদারদের গড়িমসি বন্ধ করে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। হাসপাতালে পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য বিভাগ ব্যর্থ হলে এলজিইডিকে এই দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেন তিনি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কৃষি বিপণন, বিসিক ও ওষুধ প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, বাজারে মসলা ও লবণের দাম বাড়ছে এবং যত্রতত্র ওষুধের দোকান স্থাপন হচ্ছে। লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয় এবং এই দপ্তরগুলোকে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।