বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার নিয়ে কটুক্তিমূলক বক্তব্য দেয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। একই সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে দলীয় পদ বাতিল ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিত সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদারের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সদর উপজেলা যুবমহিলা লীগের আহ্বায়ক ফাতেমা আনোয়ার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ১৭ মে বৃহস্পতিবার যশোর প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে ফাতেমা আনোয়ার নির্বাচন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় করেন। ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জামাতাও বিএনপি করেন। ফাতেমা আনোয়ারের এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদারের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ও আসন্ন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জামাতাও বিএনপি করেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘তার স্বামী জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং একই পরিবার থেকে একাধিক দল করতেই পারে।’ তার এই বক্তব্যের বিষয়টি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন এবং সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই সাথে তাকে যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পদ ও প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ কেন্দ্রের কাছে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর সুপারিশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফাতেমা আনোয়ারের স্বামী আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙ্গে লিটন পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেডভুক্ত আসামি। তিনি খুন-গুম, মাদক, সোনা, অস্ত্র চোরাচালানসহ একাধিক অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে পলাতক অবস্থায় আছেন। দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তিনি ইন্টারপোলেরও ওয়ান্টেড আসামি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, ‘ফাতেমা আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীর পরিবার নিয়ে কটুক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে দলীয় বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিলসহ কেন্দ্রের কাছে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এই বিষয়ে ফাতেমা আনোয়ার বলেন, একজন রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে কেউ কথা বা মন্তব্য করবে এটা রাষ্ট্রের নাগরিকের অধিকার। আমার বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা আমাকে অবিচার করছে বলে মনে করছি।’
যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও অপরটি যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। ফাতেমা আনোয়ার কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।